ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কদর বাড়ছে শালুকের

বদরুল আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
কদর বাড়ছে শালুকের বুল্লা বাজারে টুকরিতে করে শালুক বিক্রি করছেন জানু মিয়া, ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: হাওরের পানিতে অযত্নে বেড়ে ওঠা শালুক আগে ছিল অভাবী মানুষের খাবার। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর কদর এখন দেশজুড়ে।

পুষ্টি সন্ধানীদের কাছেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশ।

উৎপাদনের খরচ নেই, শুধু পানি থেকে তুলে আনার কষ্টটুকু মেনে নিলেই উপার্জনের সুযোগ। সেজন্য শালুক তুলতে আগ্রহী হাওরপারের অনেক মানুষ। অন্যদিকে সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কিনে দিগুণ মূল্যে বিক্রি করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। সেজন্য বাজারে শালুক এখন আকর্ষণীয় খাদ্যপণ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় শহরগুলোতে শালুকের দাম ভিন্ন। তবে হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বাজারের ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ অথবা ৮০ টাকায়। দোকানির মজুদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভিড় লেগেই থাকে টুকরির সামনে। এসব বিবেচনায় বাণিজ্যিকভাবে শালুক চাষ হলে আসতে পারে ভালো সফলতা- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বিশ্লেষক এবং কৃষি কর্মকর্তারা।

লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজারে টুকরিতে (ঝুড়ি) করে শালুক বিক্রি করছিলেন বছর চল্লিশের জানু মিয়া। খুচরা বিক্রি দিনে প্রায় ৫০ কেজি। তিনি বাংলানিউজকে জানালেন, আমনের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় শালুকের উৎপাদন কমেছে। তবে এখনও লাখাই উপজেলার পাঁচটি হাওরের পানিতে প্রচুর শালুক পাওয়া যায়।

জানু মিয়া আরও জানান, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ দলবদ্ধভাবে হাওর থেকে শালুক তোলেন। তাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে কিনে নেন তিনি। এরপর সিদ্ধ দিয়ে বাজারে বিক্রি করেন ৬০ টাকা কেজি দরে। গেল ১০ বছরে শালুক বিক্রির মাধ্যমে চার সদস্যের পরিবার চালানোর পাশাপাশি কিছু জমিরও মালিক হয়েছেন তিনি।  

একই উপজেলায় স্বজনগ্রামের শিশু মিয়াও বুল্লা বাজারে শালুক বিক্রি করেন প্রায় আট বছর ধরে। এ ব্যবসায় তার সংসার চলে যাচ্ছে ভালোভাবে। তবে সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তিনি বাণিজ্যিকভাবে শালুক চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

শুধু লাখাই উপজেলায়ই নয়; হবিগঞ্জ সদর, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ এবং বাহুবল উপজেলার বিভিন্ন হাওরে এখনও শালুক পাওয়া যায়। জেলা শহরের বাজারগুলোর ফুটপাতে শালুক বিক্রি করেন অনেক ছোট দোকানি।  

কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে ভেজা শালুক ৩০ টাকা কেজিতে কেনা যায়। প্রতি ৫০ কেজি সিদ্ধ দিলে ওজন কমে প্রায় চার কেজি। পরে এগুলো বাজারে এনে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে ভালো মুনাফা আসে।

লাখাইয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অমিত ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে জানান, এক সময় হাওরে ব্যাপকভাবে শালুক উৎপাদন হতো। তবে বোনা আমনের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় এখন তা কমেছে। সরকারিভাবে একবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শালুক চাষের উদ্যোগ নিলেও পরে এর অগ্রগতি হয়নি। এটা করতে পারলে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও জানান, শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয়। যা ধীরে ধীরে বড় হলে তাকে শালুক বলা হয়। বাজারে এর ডাঁটারও বেশ চাহিদা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে শালুক অত্যন্ত উপকারী। এটি সবজি হিসেবে কাঁচা, সিদ্ধ করে ও পুড়িয়ে খাওয়া যায়। শরীরে খাদ্যশক্তির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এ সবজি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে শালুক বেশ উপকারী। একটি ১০০ গ্রাম ওজনের শালুকে খনিজ পদার্থ রয়েছে ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ১৪২ কিলোক্যালোরি, প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম এবং ক্যালসিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।