ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অগ্রহায়ণের শুরুতেই কৃষকের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
অগ্রহায়ণের শুরুতেই কৃষকের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব গান গেয়ে ধান কাটা উৎসব শুরু। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: মাঠের পাকা ধানের সোঁদা গন্ধে এখন আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে কৃষকের মনে। ভোরের কুয়াশা মাখা রোদের পরশ পেতেই হিমেল হাওয়ায় দোল খেয়ে উঠছে স্বর্ণালি ধানের শীষ।

ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো যেন মিতালি করেছে সোনাঝরা ধানের সঙ্গে। সূর্যের আলো তার গায়ে পড়তেই মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াচ্ছে মাঠজুড়ে। এমন আবহেই দুয়ারে হাজির হয়েছে অগ্রহায়ণ।

আর ঋতুরানী হেমন্ত মানেই বাংলার প্রকৃতিতে নবান্ন উৎসবের সময়। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এ দুই অংশের অর্থ হচ্ছে ‘ধান’ ও ‘কাটার মওসুম’ বা 'বছর'। মুঘল সম্রাট জালাল উদ্দীন মুহাম্মদ আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই থেকে এ মাসজুড়েই উৎসবমুখর থাকে কৃষকের মাঠ ও বাড়ির উঠোন। ধান কেটে গোলায় ভরতে ব্যস্ত থাকেন কৃষাণ-কৃষাণী। নতুন ধানের পিঠা-পুলি আর পায়েস রান্না নিয়ে ঘরে ঘরে শুরু হয় আবহমান বাংলার নবান্ন উৎসব।  

অগ্রহায়ণের শুরুতেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ছে- রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে। প্রথম দিন থেকেই একযোগে শুরু হয়েছে এ অঞ্চলের ধান কাটার উৎসব। হিম শীতল আবহাওয়ায় কোনো না কোনো মাঠে বর্ণিল আয়োজনে চলছে ধান কাটার মহোৎসব। ব্যতিক্রম হয়নি রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাগমারা, পবা, মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা ও তানোরসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও। অগ্রহায়ণের প্রথম দিন থেকে একযোগে ধান কাটা শুরু হয়েছে।  

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম চৈতন্যপুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবারের মত এবারো সেখানে ধান কাটা উপলক্ষে বর্ণিল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এলাকার স্বনামধন্য কৃষি উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান আয়োজন করেছিলেন আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের। আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের কৃষকরা তাদের নিজ সংস্কৃতিতে নেচে-গেয়ে ধান কাটা মৌসুমের সূচনা করেন। সাঁওতাল রমনী ও পুরুষদের ধান কাটার প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।  

তাদের ধানকাটা অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহা. হবিবুর রহমান। কাস্তে হাতে ধান কেটে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। এ সময় সেখানে ঢোল-বাদ্যের তালে নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশেন করেন আদিবাসী কৃষক-কৃষাণীরা। পুরো গ্রামে লোকজন জড়ো হন সেই উৎসব দেখার জন্য।  
 
আনুষ্ঠানিকতা শেষে গোদাগাড়ীর চৈতন্যপুরের মাঠে মাথায় মাথোইল ও হাতে কাস্তে নিয়ে ধান কাটতে নেমে পড়েন। ধান কাটার পর শুরু হয় মাড়াই। এ সময় এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাঠ ভরা ফসল দেখে কৃষকের চোখে-মুখে যেন আনন্দের বন্য বয়ে যাচ্ছিল। সোনালি ফসল গোলায় তুলতে কারোরই যেন ফুরসত নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শেষ পর্যন্ত ফলন ভালোই হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী জেলায় এবার ৭৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এবার ৭৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। তবে কয়েক দফা বন্যায় ৪৭০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। না হলে এবার বাজারে বিক্রি করেও কৃষকের ঘরে নিজেদের জন্য এক বছরের ধান উদ্বৃত্ত থাকতো।  

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল হক জানান, রাজাহীর গোদাগাড়ীসহ প্রতিটি উপজেলার মাঠে এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের চার জেলায় (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ) পুরোদমে আমন কাটা-মাড়াই কাজ শুরু হয়ে গেছে। আবহাওয়া অনকূলে থাকায় শেষ পর্যন্ত ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে বলেও মন্তব্য করেন- রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
এসএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।