সিলেট: টানা দু’দিন বিদ্যুৎহীন সিলেট। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে বুধবার (১৮ নভেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত মহানগর ও আশপাশের এলাকা এখনো বিদ্যুৎহীন।
তবে পিজিসিবি সূত্রের দাবি, প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পথে। রাতে তারা কিছু এলাকায় সরবরাহ দিতে পারবেন বলে আশা করছেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার রাত থেকে পিজিসিবি, পিডিবি ও আরইবির প্রায় চারশ’ কর্মী কাজ করছেন। মেরামতের পর তারা কিছু ফিডার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। ’
এদিকে, এ বিপর্যয়ে সিলেট নগরে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। তেমনই জরুরি সেবাও ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বালানির সাহায্যে জেনারেটর চালিয়ে চিকিৎসা সেবা টিকিয়ে রাখা হয়েছে।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই তিনদিনের জ্বালানি সংগ্রহ করে চলছি। আরও ৭২ ঘণ্টা এ জ্বালানিতে চলা যাবে। এরপর আবারও জ্বালানি পেলে সেবা অব্যাহত রাখা হবে। বিদ্যুৎহীনতার কারণে এখনো কোনো অস্ত্রোপচার ব্যাহত হয়নি। ’
অন্যদিকে, মহানগর এলাকায় কেবল একটি জেনারেটর দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সরবরাহ যথেষ্ট নয় মনে করছেন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মহানগর এলাকার সবাইকে পানি সরবরাহ সম্ভব হবে না। মেয়রের তত্ত্বাবধানে একটি জেনারেটর থেকে খাবার পানি উত্তোলন করে কেবল গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ’
বিভিন্ন মহল বলছে, ‘অগ্নিকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা যেখানে সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা কী করে সম্ভব? এজন্য বিদ্যুৎ-পানি, দু’টিরই বিকল্প সরবরাহ থাকা প্রয়োজন। ’
পানির অভাবে কদর বেড়েছে জেনারেটরের। লোকজন পানির জন্য যেমন ছুটছেন, তেমনই মোবাইল সচল রাখতে বিভিন্ন মার্কেটে ছুটছেন।
এছাড়া, বিকল্প পন্থায় জেনারেটর দিয়ে পানি উঠিয়ে দিতে ঘণ্টা প্রতি ২ হাজার টাকা দাবি করছে এক শ্রেণির সুবিধাবাদী। তাদের জেনারেটর নিয়ে বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরতে দেখা গেছে।
সিলেটের কেওয়াপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধানী জমিতে যেখানে প্রতি ঘণ্টায় তিনশ’ টাকায় সেচ দেওয়া যায়, সেখানে জেনারেটর দিয়ে মোটর থেকে পানি উত্তোলনে প্রতি ঘণ্টা ২ হাজার টাকাও নেওয়া হচ্ছে। ’
নগরের অর্ণব এলাকার বাসিন্দা তাহেরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে পানির কষ্টে সন্তানদের নিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যেতে হচ্ছে। ’
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড (পিজিসিবি) ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে দমকল বাহিনীর সাতটি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও দু’টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার এবং কন্ট্রোল প্যানেল পুড়ে পুরো সিলেট বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
এনইউ/এফএম