ঢাকা: নারী ও শিশুর প্রতি যেকোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। নারী ও শিশু নির্যাতন এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিকতা, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম মনিরা সুলতানার প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নারী ও শিশু নির্যাতনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং সহিংসতার অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০২০ সংশোধন করে ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা হিসেবে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যেকোনো অপরাধ প্রতিরোধের পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়। এছাড়া যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমাজ থেকে নির্মূল এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ ও জড়িতদের যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ছয় দফা প্রস্তাব
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর লিখিত প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নিজের উত্থাপিত ছয় দফা প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ছয়টি বিশেষায়িত বিষয়ে ‘উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন’ নামক একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময়ে আমি আমার বক্তব্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সংহতি এবং এ সঙ্কট থেকে উন্নরণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করি। আমি এ সময়ে এজেন্ডা ২০৩০, প্যারিস চুক্তি এবং আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডাকে ভিত্তি করে সঙ্কট থেকে উত্তরণে জাতিসংঘকে মূল অনুঘটকের ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়ে ছয় দফা প্রস্তাব পেশ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার উত্থাপিত ছয় দফা প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। অন্যান্য বিশ্বনেতৃবৃন্দও বিভিন্ন সময়ে তাদের বক্তব্যে এ বিষয়গুলোর ওপরেই গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, করোনাকালীন আমাদের সকল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে আমরা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতাসমূহের কাছ থেকে জরুরি আপদকালীন অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ৩৫ মিলিয়ন ইয়েন বা ৩৩ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপান। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এডিবি প্রায় ৬শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে।
জনগণের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর সরকার
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর। দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা বিধানসহ জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং জনগণের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিবা ও রাত্রীকালীন টহল জোরদার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল যাতে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করতে না পারে সে লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহ নিবিড়ভাবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
মুজিব শতবর্ষে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী জেলা বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চকপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবারকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। জাতির পিতার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায় পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বাসস্থান নিশ্চিত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দরিদ্র মানুষের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এ ধরনের ঘোষণা ও কর্মসূচি বিশ্বের আর কোনো সরকারপ্রধান এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেননি। মুজিব শতবর্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনা মহামারির অভিঘাত সত্ত্বেও প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার নীতি গ্রহণ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুদৃঢ় হয়েছে। এছাড়া সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে থেকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়নে রোল মডেল হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
এসই/এমজেএফ