ঢাকা: রোগীপ্রতি ৩০ শতাংশ কমিশনের আশায় অনুমোদনহীন মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী পাঠাতেন মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। শুধুমাত্র রোগী পাঠানোর কমিশন বাবদ হাসপাতালটি থেকে গত ১৬ মাসে ১০ লাখ টাকা নেন তিনি।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে এই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। যেখানে তিনি অকপটে সচ্ছল রোগীদের সুযোগ বুঝে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এমনকি এই কাজটিকে তিনি অপরাধ বলে মনে করেন না।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মামুনের লোক ঠিক করা আছে। সচ্ছল রোগী দেখলেই তারা রোগীর স্বজনদের বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখান। এসব বলে তারা ডা. মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। কথা অনুযায়ী রোগীর স্বজনদের তার কাছে গেলে মাইন্ড এইডে যোগাযোগ করে সেখানে পাঠিয়ে দিতেন মামুন। কখনো সরকারি অ্যাম্বুলেন্সেও রোগী পাঠাতেন তিনি।
মাইন্ড এইডে রোগী পাঠালেই ৩০ শতাংশ কমিশন পেতেন ডা. মামুন, যা প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া মাইন্ড এইডে রোগী দেখার জন্যও আলাদা টাকা পেতেন মামুন। তিনি ২০১৯ সালের জুলাই থেকে গত ৯ নভেম্বর পর্যন্ত শুধু মাইন্ড এইডে ২৫ জনের বেশি রোগী পাঠিয়েছেন বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডা. মামুন মাইন্ড এইড হাসপাতাল ছাড়াও আদাবরের মাইন্ড ওয়েল হাসপাতালেও রোগী পাঠাতেন। টাঙ্গাইলে ঢাকা ক্লিনিক নামের একটি হাসপাতালে রোগী দেখতেন। টাঙ্গাইল ও আশপাশের কোনো রোগী ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এলে তাকে কৌশলে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতেন। তবে এসব বিষয়কে তিনি দোষ হিসেবে দেখছেন না।
এ বিষয়ে তার বক্তব্য, ‘আমি তো একা নই। সরকারি হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগী পাঠান। ’
জানা গেছে, জাতীয় মানসিক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. তারিক সুমন, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের রেসিডেন্স সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মো. রাহেনুল ইসলাম, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ যোবায়ের মিয়াসহ আরও কয়েকজন মাইন্ড এইডে রোগী পাঠাতেন। এজন্য তারাও প্রতি রোগীতে মোটা অঙ্কের কমিশন পেতেন।
এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, যেসব ডাক্তারের নাম আসছে তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ডা. মামুন যে মাইন্ড এইডের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন করে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইডে পাঠিয়েছেন এর কল রেকর্ড আমাদের হাতে রয়েছে।
সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের চিকিৎসার জন্য গত ৯ নভেম্বর স্বজনরা তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আদাবরের মাইন্ড এইডে। সেখানে ভর্তির কয়েক মিনিটের মাথায় মারা যান আনিসুল করিম। পরে প্রতিষ্ঠানটির সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ নিশ্চিত হয় সেখানকার কর্মচারীদের মারধরে আনিসুল করিমের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় ১০ নভেম্বর ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলা করেন। মামলায় ১৫ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
পিএম/এইচএডি