ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েবের (দ্বিতীয় ঢেউ) ধাক্কা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার সরকার বেশি প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীজুড়ে করোনা মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ওয়েব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন জায়গায়। সেই ধাক্কাটা আমাদের দেশেও আসতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের দশম ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন থেকে সচেতন। হয়তো গতবার হঠাৎ করে করোনার প্রাদুর্ভাব আসার কারণে অনেক কাজ আমরা করতে পারিনি। কিন্তু এবার আমরা বেশি প্রস্তুতি নিয়েছি।
সবাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সব জায়গায় যেহেতু পুনরায় করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। সবাইকে আমার আহ্বান যে প্রত্যেকে অনন্তপক্ষে মাস্ক পরে থাকবেন। ভাইরাসটা যাতে কারো শরীরে স্থান না পায় তার জন্য উষ্ণ গরম পানি খাওয়া, গরম পানির গার্গল করা এবং সব সময় হাত ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সবই যেন ভালোভাবে মেনে চলেন। বেশি লোকজনের সমাগম সেখানে অবশ্যই মাস্ক পরে থাকবেন। সবাইকে এই অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। এখনো গবেষণা চলছে আমরা সেটার আগাম বুকিং দিয়েছি। যাতে সেটা চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আনতে পারি। সেই ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেদিক থেকে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি করোনা ভাইরাস থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি গতিশীল যাতে থাকে তারজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি, নিয়ে যাচ্ছি। আমরা তৃণমুল পর্যায়ে পর্যন্ত সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি যাতে দেশের মানুষের কষ্টটা লাঘব হয়। তারপরও এটা ঠিক করোনার জন্য কিছু কষ্ট মানুষের আছে।
মুজিববর্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন প্রসঙ্গে টেনে শেখ হাসিনা বলেন, এই অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় তিনি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা সম্পৃক্ত-আমাদের প্রতিরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সর্ব কাজে যারা সম্পৃক্ত সবাইকে নিয়ে এবং সব দলকে নিয়ে তিনি ঐক্য সৃষ্টি করেছিলেন, জাতীয় ঐক্য। তার লক্ষ্য ছিলো উৎপাদন বাড়ানো, দেশকে সমৃদ্ধশালী করা এবং দ্রুততার সঙ্গে দেশকে উন্নত করা। এর কারণে তিনি ক্ষমতাকে একেবারে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নটা শুরু হবে। তার জন্য যে পরিবর্তনটা তিনি এনেছিলেন-সেটাকে ভালোভাবে করবারও সুযোগ পাননি। তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। তারপর থেকে একটা অপবাদ দেওয়া হলো যে, তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন, সমাজতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন। যে মানুষটি তার জীবনের সবটুকু বিসর্জন দিয়েছেন একটি জাতির জন্য। যে মানুষটি তার জীবনের কোনো আরাম-আয়েশের দিকে তাকাননি। বার বার নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন একটি জনগোষ্ঠীর জন্য। তাদের একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দেওয়ার জন্য। একটি রাষ্ট্র দেওয়ার জন্য। তিনি কী কারণে ক্ষমতার লোভ করবেন? ক্ষমতার লোভ থাকলে তো তিনি অনেকবারই ক্ষমতায় যেতে পারতেন। যখনই যে আসছে তাকে তো বলেছে মন্ত্রী বানাবেন-ক্ষমতা দেবেন। সেরকম ছিলো। কিন্তু তিনি তো তা চাননি। তিনি একটি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবর্তন আনার জন্য এই সংসদে যে ভাষণটি দিয়েছিলেন ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আমাদের এই সংবিধান সংশোধন করেন সেই ভাষণটি আজকে আমরা শুনতে চাই। আমাদের সমগ্র জাতিরও শোনা দরকার যে তিনি কেন করেছিলেন? কিসের জন্য করতে চেয়েছিলেন। তার উদ্দেশ্যটা কী ছিলো? সেটা শোনানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পর সংসদে বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণের অডিও বাজানো হয়। এরপর স্পিকার বিশেষ অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২০
এসকে/এএটি