মৌলভীবাজার: চা-বাগানের শিশুরা। কুয়াশার আবরণ ভেদ করে প্রতিদিনের মতো হঠাৎ আগমন।
নিজস্ব পরিবেশেই বড় হয়ে উঠেছে তারা। বাবা-মা চা-বাগানে নানান কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই সকালে বেড়িয়ে যান, ফেরেন প্রকৃতির আলো নিভে আসার পর। শিশুদের প্রতি অপেক্ষাকৃত সার্বক্ষণিক দায়িত্বে শাসনের সুযোগ নেই তাদের। দারিদ্রময় জীবনের শৃংখল আপাদমস্তক বেঁধে রেখেছে তাদের বাবা-মাদের। প্রতিমুহূতের শ্রমিক সাজিয়ে রেখেছে তাদের। শহরে অভিভাবকের মতো সন্তানের দিকে তাদের খেয়াল রাখার সময় নেই।
কারোনার মধ্যে চা জনপদের এসব শিশুরা নিজেদের মতো করেই সময় কাটায়। মুখে নেই স্বাস্থ্যসচেতনার মাস্ক। নেই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো ধরনের ইচ্ছা। তবে শহরের আরামপ্রিয় শিশুদের থেকে তারা অনেকটাই প্রভাতপ্রিয়। অনেকটাই স্বাস্থ্যসচেতন। প্রভাতী মৃদু বাতাস গায়ে মাখতে সদা প্রস্তুত তারা।
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল শহরের এক চা বাগানে খুব ভোরে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা। ৭ জনই জানালো তাদের এমন আগমনের নিজস্ব অনুভূতি। তাতে ধরা পড়ে করোনাকালীন পড়াশোনায় একদমই মন নেই তাদের। কেউবা পড়াশোনা ছেড়ে ভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করে। এছাড়া স্বাস্থ্যসচেতনতার দিকটিও ধরা পড়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনায়। বাংলানিউজকে তারা তাদের পরিচয় জানালো। নামের তালিকা যথাক্রমে-সিপন সাঁওতাল, সুমন হাজরা, অমিত রায়, তনয় রায় ঘাটোয়াল, সাজন রায় ঘাটোয়াল, ইমন রবিদাস এবং সাজন নোহা।
সুমন ও অমিত মাস্ক সম্পর্কে জানায়, আমরা কেউ মাস্ক পরি না। আমাদের চা-বাগানে করোনা-টরোনা নাই।
সিপন এবং তনয় জানালো, ‘বাসায় বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না। তাই আমরা দু’দিন ধরে সকালে এভাবে হাঁটি। প্রায় ঘণ্টা খানেক। সকালে চা-বাগানের আবহাওয়াটা খুবই ভালো। ’
ইমন রবিদাস সবশেষে আক্ষেপের সঙ্গে জানালো, ‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। তারপর করোনায় স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। আর স্কুলে যাইনি। মা-বাবা মারা গেছে। বড় ভাইয়ের সংসারে থাকি। এখন আর পড়াশোনা করে কি হবে? হাতে টাকা-পয়সা নাই। কোনো কাজকাম পেলে করতাম। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, ১৭ নভেম্বর, ২০২০
বিবিবি/এএটি