ঢাকা: নারীদের মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য নারী ডোম চাই। শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত এরকম ডোম বাংলাদেশের কোনো মর্গে আছে কিনা আমার জানা নেই।
শুক্রবার (২০ নভেম্বর) বিকেলের দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেলিম রেজা বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মর্গের সরকারি ডোম এর সহযোগী হিসেবে বেসরকারি একটা ছেলে কাজ করতো। তাকে গোয়েন্দা পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। সে নারী মরদেহের সাথে অনৈতিক কাজ করেছে বলে শুনেছি। সেই ছেলে স্বাভাবিক না, বিকৃত রুচির মানুষ। যদি সে শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ডোম হতো তাহলে এই কাজ কখনই করতে পারত না।
তিনি আরো জানান, পুলিশ যেকোন নারীর মরদেহ সুরতহালে উল্লেখ করে শালীনতা বজায় রেখে মৃত নারীর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হলো।
তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো, পুলিশ কোন নারীর মরদেহের সুরতহাল তৈরি করার সময় শালীনতা বজায় রেখে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। আমাদের এখানে নারী ফরেনসিক চিকিৎসকও আছেন। তাহলে নারী ডোম থাকবে না কেন? আমরা এখন নারী ডোম চাই। তবে সেটা প্রশিক্ষিত-শিক্ষিত হতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নারীদের কীভাবে এই পেশায় আনবে, কিভাবে প্রশিক্ষণ দিবে সম্পূর্ণ এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।
তিনি আরো জানান, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিজেরাই হতভাগ্য। কোন স্বাভাবিক মানুষ এই কাজ করতে পারে না। সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি, খুব শিগগিরই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের রুমে সিসিটিভি লাগানো হবে সেটা দিয়ে ২৪ ঘণ্টাই মনিটরিং করা হবে। রাতে ডোমরা কিভাবে মরদেহ রিসিভ করবে, সবকিছুই মনিটরিং করা হবে। মনিটরিং আমার মোবাইলের সাথে এটাচ থাকবে আমি নিজেই ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করব।
রাজধানীর তিনটি সরকারি হাসপাতালে মর্গ আছে। এগুলোর মধ্যে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের সঙ্গেও। তিনি জানান, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে যে ঘটনা ঘটেছে বা যে ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিকৃত রুচির অধিকারী। সে স্বাভাবিক নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, নারীদের মরদেহ সঠিকভাবে সংরক্ষণ এর জন্য নারীদের দরকার। কারণ আমাদের এখানে নারী চিকিৎসক আছেন। নারীদের মরদেহ সংগ্রহের জন্য খালি নারীরা নেই।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ঘটনার পরপরই আমাদের মর্গে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছি। যেহেতু আমাদের লোকবল অনেক সংকট। আমাদের সরকারিভাবে ডোম আছে মাত্র দুইজন। এছাড়া আরো একজনকে এ্যানাটমী বিভাগ থেকে এনে কাজ করিয়ে থাকি। সরকারিভাবে নিয়োগ ছাড়া বাইরের কোনো মানুষ যেন মর্গে প্রবেশ করতে না পারে এরকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাকসুদুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের মর্গে কোনো সরকারি ডোম নেই। একটা ছেলে আছে তাকে আমরা নির্দিষ্ট কিছু পয়সা দিয়ে রেখেছি। তার বাপ-দাদারা এই কাজ করতো। সেও এখন ঐ কাজ করছে। নারীদের জন্য নারী পুলিশ আছে, নারীদের ময়নাতদন্তের জন্য নারী ফরেনসিক চিকিৎসক আছে। সরকার যদি নারী ডোম নিয়োগ দেয়, তাহলে তো অনেক ভালো হয়। নারী মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য নারী ডোম থাকাটাই যৌক্তিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২০
এজেডএস/এমকেআর