মুন্সিগঞ্জ: পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১ ও ২ নম্বর পিলারের ওপর ৩৮তম স্প্যান (‘ওয়ান-এ’) বসানো হচ্ছে শনিবার (২১ নভেম্বর)। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বসতে যাওয়া এ স্প্যানের মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৫ হাজার ৭০০ মিটার।
স্প্যানটি বসানোর প্রস্তুতি হিসেবে নদীপাড়ে মাটি কাটা ও ড্রেজিং করে হয়েছে। যাতে পৃথিবীর বড় ভাসমান ক্রেনটি দুই পিলারের মধ্যে অবস্থান করতে পারে। ৩৭তম স্প্যান বসানোর ৯ দিনের মাথায় শুরু হচ্ছে ৩৮তম স্প্যান স্থাপনের কার্যক্রম। এরপর আর বাকি থাকবে ৩টি স্প্যান।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ৩৮ তম '১-এ' স্প্যানটি নিয়ে ভাসমান ক্রেন 'তিয়ান-ই' রওনা করে। এরপর নির্ধারিত পিলারের কাছে এসে পৌঁছায় ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে। এখন নোঙর করার চেষ্টা চলছে। ৬টি ক্যাবলের(তার) সাহায্যে ভাসমান ক্রেনটিকে চারপাশে বাঁধা হচ্ছে নোঙর সম্পন্ন হলে সুবিধাজনক পজিশনিং শেষে স্প্যানটি তোলা হবে পিলারের উচ্চতায়। প্রাকৃতিক কোনো কারণ বাধা না হলে এবং পর্যাপ্ত সময় থাকলে শনিবারের মধ্যেই স্প্যানটি বসিয়ে দেওয়া যাবে।
প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, গেল মাসেও চারটি স্প্যান বসানো সম্ভব হয়েছে। চলতি মাসেও টার্গেট অনুযায়ী চারটি স্প্যান বসানোর কথা আছে। ৩৮তম স্প্যান বসানো হয়ে গেলে বাকি থাকবে এ মাসের টার্গেট অনুযায়ী একটি বসানো। ডিসেম্বর মাসে এরপর বাকি ২টি স্প্যান বসানো হবে। আর এসব বসানো হবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানো হবে।
এদিকে, সবচেয়ে শুরুর স্প্যান হলেও এত দেরিতে বসার কারণ, ইংরেজি ‘এইচ’ বর্ণমালা আকৃতির পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ডিজাইন আলাদা। এ পিলার দিয়েই সেতুতে গাড়ি ও ট্রেন প্রবেশ করবে। মাটির গঠন প্রকৃতি ও গভীরতার তারতম্যের কারণে মাওয়া প্রান্তে বেশ কয়েকটি পিলারের নকশা জটিলতা দেখা দেয়। এর জন্য কাজের গতি সচল রাখতে মাওয়া প্রান্ত থেকে না শুরু করে জাজিরা প্রান্ত থেকে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হয়।
পদ্মা সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে এরই মধ্যে বসানো হয়েছে ৩৭টি। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তে ২৯টি আর মাওয়া প্রান্তে ৮টি। সর্বশেষ তিনটি স্প্যান বসানো হবে ডিসেম্বরের মধ্যেই।
জানা গেছে, এর আগে ১২ নভেম্বর ৩৭তম স্প্যানটি স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে। ৬ হাজার ১৫০ মিটারের সেতুতে স্প্যান বসবে মোট ৪১টি। ৩৮তমটি বসানো হলে বাকি থাকবে ৩টি স্প্যান বসানো।
অপরদিকে, স্প্যান বসানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে পদ্মা সেতুর মূল সেতুর প্রকৌশলী জানান, প্রথমে স্প্যানটি নিয়ে ভাসমান ক্রেনটিকে নোঙর করা হয়। এরপর ২ পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে পজিশনিং করা হয়। স্প্যানটিকে ক্রেনের সহায়তায় তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। পরে রাখা হয় ২ পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর। আর এসব কাজ করতে হয়েছে সতর্কতার সঙ্গে। স্প্যান বসানোর আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ঠিকঠাক আছে কিনা নিশ্চিত করা হয়। এখন পাশের পিলারে স্থাপন করা স্প্যানের সঙ্গে ঝালাই করে দেওয়া হবে। যেটি করতে কয়েকদিন সময় লাগে। স্প্যান বসানোর সময় আশপাশ দিয়ে যাতে কোনো নৌযান চলাচল না করে সেদিকে দৃষ্টি রাখে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
পদ্মাসেতুতে বাকি ৩টি স্প্যানের মধ্যে, ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১ নম্বর পিলারে ৩৯তম স্প্যান (২-ডি), ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২ নম্বর পিলারে ৪০তম স্প্যান (২-ই) ও ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান (২-এফ) বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর। তবে আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এ শিডিউল দু-একদিন আগে পরেও হতে পারে।
পদ্মা সেতুতে মোট ৪২টি পিলারে বসানো হবে ৪১টি স্প্যান। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ ১৫০ মিটার (৬.১৫ কিলোমিটার)। মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
এসআই