ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুবাই পালাতে চেয়েছিলেন ‘গোল্ডেন মনির’

প্রশান্ত মিত্র, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
দুবাই পালাতে চেয়েছিলেন ‘গোল্ডেন মনির’

ঢাকা: দোকানের কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এর মধ্যেই তিনি দুবাই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

আটক না হলে শনিবারই (২১ নভেম্বর) দেশ ছাড়ার কথা ছিল তার।

এদিন সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার নিজ বাসা থেকে গোল্ডেন মনিরকে আটক করা হয়। এ সময় তার বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণ, বিদেশি পিস্তল-গুলি, মদ, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও নগদ এক কোটি নয় লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

এছাড়া তার বাড়ি থেকে অনুমোদনহীন দু’টি বিলাশবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়, যার প্রতিটির বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এছাড়া তার ‘অটো কার সিলেকশান’ নামে গাড়ির শো-রুম থেকে আরও তিনটি অনুমোদনহীন বিলাশবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

র‌্যাব জানায়, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট, ফ্ল্যাটের মালিক গোল্ডেন মনির। রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অসংখ্য প্লট হাতিয়ে নেন তিনি। তবে প্রাথমিকভাবে ৩০টি প্লট ও ফ্ল্যাটের কথা স্বীকার করেছে মনির।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়েছে। এর আগেও গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে দুদক ও রাজউকের মামলা রয়েছে। মনির মূলত একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী ও স্বর্ণের চোরাকারবারী। এ থেকেই মনির পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ হিসেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোল্ডেন মনির দুবাইতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য তার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। শনিবার গ্রেফতার এড়াতে পারলেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতেন। এদিন বেলা ১১টার দিকে অ্যামিরাত এয়ারলাইনসের (EK-585) ফ্লাইটে মনিরের দুবাই যাওয়ার কথা ছিল।

জানা গেছে, গোল্ডেন মনির নিজের নিরাপত্তায় লাইসেন্সকৃত দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখতেন। এর মধ্যে একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান। তবে বৈধ দু’টি অস্ত্রের পাশাপাশি একটি অবৈধ পিস্তলও তার দখলে ছিল। যেটি তাকে আটকের সময় তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। বিদেশ যাওয়ার জন্য নিজের লাইসেন্সকৃত দু’টি অস্ত্র বাড্ডা থানায় জমাও দিয়েছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, গোল্ডেন মনিরের অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

তবে গোল্ডেন মনিরের পরিবারের দাবি, তিনি চিকিৎসার জন্য প্রায়ই দুবাই যান। এবারো চিকিৎসা করাতে দুবাই যেতেন। তবে কিসের চিকিৎসা করাতে যেতেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি পরিবার।

গোল্ডেন মনিরের ছেলে মোহাম্মদ রাফি হোসেন বলেন, বাবা প্রায়ই চিকিৎসার জন্য দুবাই যান। এবারো চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন, এজন্য তার ফ্লাইট কনফার্ম ছিল। এর আগেই র‌্যাব তাকে আটক করে ফেলে।

তবে মনিরের শারীরিক সমস্যা বা চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিয়ে পারেননি রাফি হোসেন।

বাবার অভিযোগের বিষয়ে রাফি বলেন, আমার বাবা নির্দোষ। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। বাবার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে সব ভিত্তিহীন। তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। আমরা আইনিভাবে সব মোকাবিলা করবো। সেখানেই প্রমাণ হবে বাবা দোষী কিনা।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে, অস্ত্র আইনে ও বৈদেশিক মুদ্রা রাখায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করবে র‌্যাব। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুদক, সিআইডি, বিআরটিএ, এনবিআর, রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হবে।

গোল্ডেন মনিরকে আটকের পর র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে কারো সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

বাংলদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।