ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাতের আঁধারে গাছ কাটা-মাছ নিধনে সক্রিয় চক্র, দিশাহারা চাষিরা 

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
রাতের আঁধারে গাছ কাটা-মাছ নিধনে সক্রিয় চক্র, দিশাহারা চাষিরা  ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: বাগেরহাটের কচুয়ায় রাতের আঁধারে ক্ষেতে লাগানো সবজি গাছ কাটা এবং বিষ দিয়ে ঘেরের মাছ মেরে ফেলায় একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে এ দিশাহারা চাষিরা।

সাম্প্রতিক সময়ে চক্রটির দুর্বৃত্তায়নে কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের বিষারখোলা গ্রামের অনেক চাষি নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। কোনোভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না রাতের আঁধারে ক্ষেতের সবজি কাটা। ঋণের টাকায় লাগানো ফসল এভাবে ধ্বংস হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

বিষারখোলা গ্রামের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে তাদের গ্রামের প্রায় ২০ জন চাষির কয়েক একর জমির সবজির গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে মো. দাউদ মৃধার ৭৪ শতক জমির ১৩শ’ ও অদুদ মৃধার ১৫শ’ টমেটো গাছ এবং খোকন মৃধার শতাধিক লাউ এবং ৮০টি টমেটো গাছ, রুহুল মৃধার ২শ’ টমেটো গাছ কেটেছে গত মঙ্গল ও বুধবার (১৭, ১৮ নভেম্বর) রাতে। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাতেও একই এলাকার হিন্দুপাড়ার বেশ কয়েকজন চাষির শশা, টমেটো, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি গাছ কেটে ফেলেছে চক্রটি।  

বছর দুই ধরে ঘেরে বিষ দেওয়া ও সবজি গাছ কেটে ফেলা এই চক্রের আক্রমণ শুরু হয় কচুয়া উপজেলায়। এ বছর গজালিয়া ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশত মাছ চাষির ঘেরে বিষ দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কচুয়ার অন্যান্য এলাকায়ও সক্রিয় রয়েছে ঘেরে বিষ দিয়ে মাছ চুরি করা এই চক্র। অনেক ক্ষেত্রে চুরি না করেও শুধু ক্ষতি করার জন্য ঘেরে বিষ দেয় চক্রটি।  

এদিকে, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্বৃত্তায়নে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে ওই এলাকার চাষিরা।  চক্রটির হাত থেকে ফসল বাঁচতে চাষিরাও নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ। কেউ কেউ ক্ষেতের পাড়ে মাঁচা বানিয়ে ঘুমানো শুরু করেছেন। তারপরও পারছেন নিজের ফসল রক্ষা করতে।  

ছবি: বাংলানিউজ

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সবজি গাছ কাটার প্রতিবাদ ও চক্রটি কারা তা খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।  

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন শিকদার, ক্ষতিগ্রস্ত চাষি মো. নাঈম মৃধা, মো. দাউদ মৃধা, অদুদ মৃধা, রুহুল মৃধা, মজিবুর রহমান মৃধা, স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিরাজুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলী মৃধা, মো. শহিদুল ইসলাম, আব্দুস সালাম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, গত এক সপ্তাহে রাতের আঁধারে গজালিয়া ইউনিয়নের বিসারখোলা গ্রামের প্রায় ২০ জন চাষির কয়েক একর জমির টমেটো, লাউ, শশাসহ বিভিন্ন ফসল কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে চাষিদের ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ঋণের দায়ে চাষিদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই দুস্কৃতকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষি অদুদ মৃধা বলেন, ঋণের টাকা দিয়ে ১৫শ’ পিস টমেটো গাছ লাগিয়েছি। এতে আমার প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু দুর্বৃত্তরা আমার সব গাছ কেটে ফেলেছে। আমি এখন এই ঋণ কীভাবে শোধ করবো?। শুধু অদুদ মৃধা নয় এই এলাকার বেশিরভাগ চাষিই যে কোনো মাধ্যমে ঋণ করে টাকা নিয়ে সবজি চাষ করে থাকেন।

চাষি সালাম শেখ বলেন, চক্রটি ঘেরে বিষ দিয়ে মাছও ধরে নিয়ে যায়। আবার যাওয়ার সময় আরও কিছু বিষ ঢেলে দিয়ে যায়, যেন ঘেরের অবশিষ্ট মাছ মারা যায়। এভাবে চলতে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।

গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নিজস্ব পূঁজি না থাকায়, ঋণ করে এবং সুদে টাকা এনে সবজি চাষের মৌসুমে সবজি চাষ করেন তারা। পরে সবজি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করেন। কিন্তু কিছু দিন ধরে একটি দুস্কৃত চক্র এই এলাকার মানুষের ঘেরে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলছে। রাতের আঁধারে সবজি গাছ কেটে ফেলছে। ফলে চাষিরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। সঠিক তদন্ত করে এই দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।