ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হল ‘স্বাধীনতা চত্বর’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হল ‘স্বাধীনতা চত্বর’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: দৃষ্টি নন্দন আর আধুনিকায়ন শেষে দীর্ঘ সময় পরে উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হল বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল ‘স্বাধীনতা চত্বরের’। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সকল আন্দোলন সংগ্রাম ও জেলার সাংস্কৃতিক প্রাণ কেন্দ্র এই ‘স্বাধীনতা চত্বর’ পৌর টাউন হল ময়দান।

 
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই টাউন হল প্রতিষ্ঠা হয়। ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে পাবনা টাউন হল। অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য এই টাউন হল চত্বর।

ছবি: বাংলানিউজ

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অশ্বীনী কুমার দত্ত, এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এই টাউন হল ময়দানে ভাষণ দিয়েছেন। ১৯০৮ সালে এই টাউন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন, যেখানে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়া শিল্পী আব্বাস উদ্দীনসহ বহু শিল্পী এখানে গান গেয়েছেন। পরবর্তীতে পাবনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটিকে মুজিব বাহিনীর সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চ নাম দেন। সময়ের প্রয়োজনে এই টাউন হলকে আরও আধুনিকায়নের দাবী উঠে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনার নতুন প্রজন্ম পাবনা টাউন হলকে আরও আধুনিয়ন করে ‘স্বাধীনতা চত্বর’ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

যার ফলশ্রুতিতে পাবনা পৌরসভার সহায়তায় স্কয়ার গ্রুপের অন্যতম পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির নামে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে সবার অংশগ্রহণে বৃহত্তর পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিবাহিনী এবং মুজিব বাহিনী প্রধান রফিকুল ইসলাম বকুলের স্মরণে পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হলের মুক্তমঞ্চের নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা চত্বর’।  

ছবি: বাংলানিউজ

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই  মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনীর পাবনা অঞ্চলের অন্যতম সদস্য ও স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ফলক উন্মোচন এবং এ চত্বরের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্থানীয় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের উদ্যোগে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্বাধীনতা চত্বরের নির্মাণকাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হয়। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ নভেম্বর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক স্বাধীনতা চত্বরের শুভ উদ্বোধন করবেন।    

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, আধুনিকায়নের পর এই স্থানটি হল উত্তরবঙ্গ তথা দেশের মধ্যে অন্যতম ‘স্বাধীনতা চত্বর’ হিসাবে গণ্য হবে। যেখানে প্রতিটি ইট পাথরের নকশায় মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ,  স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিদ্যমান। স্বাধীনতা চত্বরের প্রধান মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্ত ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। যার দুই পাশে দু’টি গ্রীন রুম এবং টয়লেটসহ ওয়াশরুম রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ও প্রস্ত ২৪ ফুট। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১৮ ফুট ও প্রস্ত ১১৭ ফুট। যার তিনদিকে দুই স্তরের বসার গ্যালারি রয়েছে। মাঠের উত্তরপুর্ব কর্নারে প্রবেশের প্রধান ফটক ও দক্ষিণ ও পুর্ব কর্নারে ছোট একটি গেট রয়েছে। এছাড়া সর্বোপরি পুরো মাঠে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সবুজ ঘাস।

ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার মানুষ সর্বপ্রথম পাক-হানাদারকে প্রতিহত করে। তাই এই স্বাধীনতা চত্বর পাবনাবাসীকে নতুন মাত্রায় পৌঁছে দেবে।

পাবনা পৌরসভার মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু বলেন, স্বাধীনতা চত্বর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মর পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ইতহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে পড়বে। ঐতিহাসিক এই স্বাধীনতা চত্বর পাবনার আপামোর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। আবারও প্রান ফিরে পাবে এই স্থানটি।

স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুচনা লগ্নেই সারা দেশের মধ্যে পাবনা প্রথম হানাদার মুক্ত হয়। এখানেই এ জেলার প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনা লালন করেই এ চত্বরে নির্মাণ শুরু করা হয় একটি অত্যাধুনিক বিশাল মঞ্চ।  ইতিহাস বিজড়িত এই স্থানটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।