ঢাকা: প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি ও গাড়ি সেবা নগদায়ন অনিয়মের বিষয়ে সতর্ক করে আবারও চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সরকারের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির চাকরিজীবীরা সুদমুক্ত ঋণের জন্য প্রাধিকারপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। আর একটি নীতিমালার অধীনে তাদের গাড়ি দেওয়া হয়।
‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী, গাড়ি সুবিধার প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলতে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সুপারিশক্রমে সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে কমপক্ষে তিন বছর অতিক্রম করেছেন এমন কর্মকর্তা, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব/সিনিয়র সচিবকে বোঝানো হয়। ’
নীতিমালার আওতায় গাড়ি কেনার জন্য সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা সুদবিহীন ঋণ দেওয়া হয়। আর গাড়ির জ্বালানি তেল, ড্রাইভারের বেতনসহ রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাবদ প্রতিমাসে আরও দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।
কিন্তু কর্মকর্তাদের এই গাড়ি ব্যবহার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি গাড়ি অফিসের কাজে ব্যবহার না করেও অনেকেই রক্ষণাবেক্ষণের পুরো টাকা তুলে নিচ্ছেন।
এসব অনিয়ম দূর করতে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর, ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ৮ মার্চ সতর্ক করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কাছে চিঠি দেওয়া হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন থেকেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
সম্প্রতি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলা হয়, নীতিমালার আওতায় সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়। এ সকল কর্মকর্তাদের গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালার আওতায় সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমানে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু কিছু কর্মকর্তার সুদমুক্ত ঋণের গাড়ি ব্যবহার না করে মন্ত্রণালয় বিভাগের অধীন অধিদফতর, সংস্থা ও উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি এমনকি টিওঅ্যান্ডভুক্ত মাইক্রোবাস ব্যবহার করে অফিস যাতায়াতসহ পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে কিছু কিছু কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এ গাড়ি ব্যবহার না করে গাড়ি সেবা নগদায়নের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করছেন। এতে সরকারের জ্বালানি ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ বিষয়টি রোধে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত এবং সরকারি গাড়ি অপব্যবহার থেকে বিরত রাখতে নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এ নীতিমালা ব্যত্যয়ে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী অসাদাচরণ বলে গণ্য হবে বলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
চিঠিতে চারটি নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী শতভাগ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীনস্ত দফতর/সংস্থা/উন্নয়ন প্রকল্পের যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না।
প্রেষণ/মাঠ প্রশাসন/প্রকল্পে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সুবিধা থাকলে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ নির্ধারিত অর্থের ৫০ শতাংশ পাবেন।
কর্মস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও অধীন দফতর/সংস্থা/উন্নয়ন প্রকল্পের যানবাহন ব্যবহার করা ‘অসদাচরণ’ বলে গণ্য হবে।
এর ব্যত্যয় হলে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী অসাদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে।
চিঠিতে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি এবং সরকারি যানবাহন ব্যবহারে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ যথাযথভাবে নিশ্চিত করাসহ মন্ত্রণালয়/বিভাগের অধীন দফতর/অধিদফতর/পরিদফতর এবং সংস্থাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সচিবদের অনুরোধ জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২০
এমআইএইচ/এইচএডি/