ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাস্ক বিতরণ করে বেড়ান বাবুর্চি সোহেল!

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
মাস্ক বিতরণ করে বেড়ান বাবুর্চি সোহেল!

ঢাকা: পেশায় বাবুর্চি মো. সোহেল। ক্যান্সারে আক্রান্ত মাকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে জেনেছেন রোগীদের দুর্ভোগ।

জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকেই করোনাকালীন সময় সমাজের খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। রাজধানীর রাজপথে ঘুরে ছিটিয়ে যাচ্ছেন জীবাণুনাশক। খেটে খাওয়া মানুষদের বিতরণ করছেন মাস্ক।

সোমবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বর ঘুরে মাস্ক বিতরণ ও জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছিলেন সোহেল। সেখানেই তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।

সোহেল বলেন, আমার মা একজন ক্যান্সারের রোগী। মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আসার সময় দেখেছি রোগীদের কতোটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই মহামারি রোগে যেন কেউ আক্রান্ত না হয় এজন্যই আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে হকার, রিকশাচালক ও গরীব মানুষের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করে বেড়াচ্ছি।

বাবা-মা, ভাই-বোন ও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে রাজধানী মিরপুর-১১ নম্বর ডি-ব্লক এলাকায় থাকেন সোহেল। তার বাবাকে মিরপুরে সবাই মো. আলী বাবুর্চি নামে চেনেন।  

‘কবে থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন’ জানতে চাইলে সোহেল বলেন, লকডাউনের ১৫-২০ দিন পর থেকেই মানুষের জন্য আমি এই কাজ শুরু করি। প্রথম শুরু করি মিরপুর-১ নম্বর কাচাবাজার থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত। আব্দুল্লাহপুর থেকে আমিনবাজার যাই। আমিনবাজার থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত আমি জীবানুনাশক ছিটিয়েছি। এসব বাজারের সব দোকানদার আমাকে চেনে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাস্ক বিতরণ ও জীবাণুনাশক ছিটাই।  

‘জীবাণুনাশক কি দিয়ে তৈরি করেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুনাশক তৈরি করতাম। এটা ক্ষতিকারক জানতে পেরে, আমি আর এটা ব্যবহার করিনা। এখন লাইজল ব্যবহার করি। ১০ লিটার পানিতে ৩ মুখ লাইজল মিশিয়ে জীবাণুনাশক সেটাই।

জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রমে অর্থ কোথা থেকে পান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পেশায় একজন বাবুর্চি। করোনা ভাইরাসের প্রভাবের আগে বাবুর্চি কাজের পাশাপাশি আমি মেয়েদের সালোয়ার কামিজের ডিজাইনের কাজ করতাম। এখন করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে আমার বাবুর্চির কাজ কমে গেছে। এখন আর আগের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানও হয় না। আমার জমানো কিছু টাকা নিয়ে এই কাজে নেমেছিলাম। বর্তমানে আমি সপ্তাহে একদিন কাজ করি। সপ্তাহের বাকিসব কয়দিন বেকার থাকতে হয়। আমি ঘরে বসে না থেকে মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বেড়াই।

সোহেল বলেন, আমি প্রতিদিন গরীব মানুষদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করে বেড়াই। কিন্তু এই মাস্কের খরচ অনেক বেশি। আমি তা কুলিয়ে উঠতে পারছিনা। এজন্য কিন্তু আমার কাজ থেমে নেই। আমাকে অনেক ভাই ১০-২০টা করে মাস্ক দিয়েছে মানুষকে বিতরণ করার জন্য। এমনকি ২-৩ বক্স করে আমাকে মাস্ক দিয়েছেন। আমার পরিচিতজনেরা আমাকে মাস্ক দিয়ে ও সহযোগিতা করেছেন যেন আমি মানুষের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করতে পারি। করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে পারি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
এমএমআই/ডিএন/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।