ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিল পরিশোধ হলেও মেরামত হয়নি আদিতমারীর কোয়ার্টারগুলো

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
বিল পরিশোধ হলেও মেরামত হয়নি আদিতমারীর কোয়ার্টারগুলো

লালমনিরহাট: একাধিক বার প্রকল্প দেখিয়ে বিল উত্তোলণ করা হলেও বাস্তবে কোন কাজই হয়নি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের আবাসন মেরামত। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সরকারি কোয়ার্টারে থাকা পরিবারগুলো।

কোয়ার্টারে বসবাসকারী ও রাজস্ব তহবিলের ব্যায় রেজুলেশনে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য কয়েকটি কোয়ার্টারে রয়েছে এ উপজেলায়। যার মধ্যে একটি কোয়ার্টার সম্পূর্ণ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় তা পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি কোয়ার্টারগুলোর ভবনের ছাদ বেয়ে বৃষ্টির পানি আর পলেস্তারা খুলে পড়ছে। দরজা-জানালা ও গেট ভেঙে পড়েছে। আবাসনে বসবাসকারীরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।  

এসব কোয়ার্টার প্রায় সময় মেরামত দেখানো হয়েছে উপজেলা রাজস্ব তহবিল থেকে। কিন্তু তা কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে কোন কাজই করা হয়নি বলে অভিযোগ আবাসনে বসবাসকারীদের।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক আশা কোয়ার্টারে বসবাসকারী এক কর্মকর্তার স্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ চার বছর ধরে এই কোয়ার্টারে বসবাস করছি। কোন দিন মেরামত করা হয়নি। জানালা ও ভবনের গেট ভাঙা। ভবনের পলেস্তারা খুলে গাঁয়ে পড়ছে। অনেকবার বলা হলেও মেরামত বা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের ব্যায় ভাউচারে দেখা যায়, গতবছর ৫ আগস্টে ২৪ হাজার ৯৫০ টাকা ও চলতি বছর ১৪ মে ২৪ হাজার ৮২০ টাকা ব্যয়ে দুইটি পৃথক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।  

অভিরুচী কোয়ার্টারেন গেটেই জমে আছে পানি। স্যাঁতস্যাঁতে দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে ভবনে প্রবেশ করতে হয়। সিড়ির জানালা ভাঙা। নিচতলার দুইটি ইউনিট বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় বইয়ের গোডাউন করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় দুই ইউনিটে দুই পরিবার বসবাস করেন। সেই কোয়ার্টারটিও গতবছর ১৪ নভেম্বর ২৩ হাজার ৪২০টাকা এবং চলতি বছর ১৩ জানুয়ারী ২৪ হাজার ৯৮০ টাকা ব্যয়ে মেরামত দেখানো হয়।

শুধু তাই নয়, রাজস্ব তহবিলের ব্যয় ভাউচারে ৬ মাসের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদের বাতি মেরামতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৫৬ হাজার ৯৬০ টাকা। উপজেলা পরিষদের অফিস রুম রঙ না করেও ২৪ হাজার ৩০০ টাকার ভাউচার দেখানো হয়। অফিসের সোফা ও পানির লাইন মেরামতে ২১ হাজার ৭৪০ টাকার ব্যয় দেখানো হয়েছে। সব মিলে গত বছর আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত ১০ মাসে উপজেলা পরিষদ ভবন ও বাসাবাড়ি মেরামতে নয় লাখ ৬৫ হাজার ৫৮ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এসব প্রকল্প ইউএনও নিজেই বাস্তবায়ন করেছেন বলেও উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভার রেজুলেশন থেকে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের একজন কর্মচারী বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলায় আগত অতিথি ও ভিআইপিদের আপ্যায়ন খরচ মেটাতে এমন ভাউচার দেখানো হইয়েছে। সরকারি ভাবে আপ্যায়ন ব্যয় না থাকায় উপজেলা পরিষদ ভবন ও আবাসন মেরামত দেখিয়ে রাজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হয়।  

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কোয়ার্টারগুলো মেরামত করা হবে। অতিথিদের আপ্যায়ন ব্যায় সরকারি ভাবে না থাকায় সেটাও মেরামতে যুক্ত হতে পারে। এ অবস্থা সারাদেশে। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়া এ ব্যয় ভাউচার বুঝতে পারবেন না।  

আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পরিষদ ভবন ও বাসাবাড়ি মেরামত ব্যয় ইউএনও নিজেই বাস্তবায়ন করেন। এমন ভুয়া বিল ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় ইউএনও'র সাথে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ইউএনও অফিসারদের নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। যা তদন্তনাধিনের রয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত হলে ইউএনও'র দুর্নীতি বেড়িয়ে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।