সাভার (ঢাকা): যখন আমাদের কারখানায় আগুন লাগে তখন আমি তিন তলায় কাজ করছিলাম। আগুনের ধোঁয়া চারপাশে ছড়িয়ে অন্ধকার হয়ে গেলে আমরা বের হতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কারখানার স্টাফরা আমাদের বের হতে দেয়নি।
লাফ দেওয়ার কারণে আমার মাথায় রড ঢুকে যায়, কোমরে ও মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাত পাই। সেই থেকে চিকিৎসা নিয়ে কোনো মতে সুস্থ হয়ে বেঁচে আছি। এখন না পারি কোথাও কাজ করতে না পারি কোথাও যেতে। আট বছরের এই জীবনে আমি আমাকে নিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।
আমরা শ্রমিকরা চিকিৎসার জন্য কিছু অনুদান ছাড়া আর কিচ্ছু পাইনি। আমি অনুদান চাই না, আমি চাই আমাদের সবার ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করে দেওয়া হোক।
চোখে মুখে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডে আহত শ্রমিক হালিমা খাতুন।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের আট বছর পূর্তি হওয়ায় সবার মতো নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানাতে মেয়ে ছুমায়াকে কোলে নিয়ে এখানে এসেছেন হালিমা।
হালিমা বাংলানিউজকে জানান, তিনি তাজরীন কারখানায় চার বছর কাজ করেছেন কোয়ালিটি ইনচার্জ হিসেবে। কাজের ফল হিসেবে পেয়েছেন পোড়া লাশের গন্ধ আর ক্ষতের যন্ত্রণা। তার স্বামী বকুল মিয়া রিকশা চালিয়ে যে রোজগার করে তাতে সংসার চলে না। তিনি যে কোথাও চাকরি নেবেন সে সুযোগও নেই। এ অবস্থায় বাসা ভাড়া সন্তানদের পড়াশোনা, নিজের চিকিৎসাসহ সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সন্তানদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।
হালিমা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এলেই আমরা আহত শ্রমিকরা নিহত শ্রমিকদের শ্রদ্ধা জানাতে কারখানায় আসি। সহকর্মীদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করি। সেই দিনটির কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে। আমাদের কষ্ট কেউ দেখার নেই। এর চেয়ে সেদিনের আগুনে মরে যাওয়ায় ভালো ছিলো।
হালিমার অভিযোগ, কেনো তারা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। কেনো তারা আজও চিকিৎসা না পেয়ে ধুকে ধুকে মরছেন? আজ এতোগুলো শ্রমিকের পরিবার কষ্টে দিন পার করছেন কেউ কী দেখে না? গত আট বছরে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি কেউ ক্ষতিপূরণের জন্য সহায়তা করেনি৷
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল ইসলাম মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, আজ তাজরীনের অনেক শ্রমিক চিকিৎসা না পেয়ে ভুগছেন। সরকার থেকে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তা নামমাত্র। শ্রমিকরা তাদের ক্ষতিপূরণ তো পায়নি। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এছাড়া তাজরীনের পাশে অথবা জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে এখানে তাদের পুনর্বাসন ও চিকিৎসা ক্যাম্প করে দেওয়া হোক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
আরএ