মুন্সিগঞ্জ: পদ্মাসেতুতে ৩৯তম স্প্যান ‘টু-ডি’ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের সেতুর ১০-১১ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হচ্ছে এ স্প্যানটি।
পদ্মার মূল নদীতে অবস্থিত এ দুই পিলারে বসানো গেলে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৫ হাজার ৮৫০ মিটার। তখন ৬১৫০ মিটার সেতুতে স্প্যান বসানো বাকি থাকবে দুইটি যাতে দৃশ্যমান হবে ৩০০ মিটার। ৩৮তম স্প্যান বসানোর ছয় দিনের মাথায় এ স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু করেছে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ‘তিয়ান-ই’ নামে ভাসমান ক্রেনটি ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটিকে বহন করে রওনা দেয়। এরপর ৪০ মিনিট সময় নিয়ে ১০-১১ নম্বর পিলারের কাছে এসে পৌঁছায়। এখন নোঙর করার কাজ চলছে।
পদ্মাসেতুর প্রকৌশলী সূত্র জানায়, স্প্যানটিকে নির্ধারিত পিলারের কাছে নিয়ে আসা, মূল নদীতে ভাসমান ক্রেনের নোঙর, পজিশনিং, এরপর পিলারের উচ্চতায় স্প্যানটিকে তোলা ও বেয়ারিংয়ের উপর রাখার ধাপগুলো সম্পন্ন করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে দুপুর ২টার মধ্যেই দৃশ্যমান হবে। তবে, কারিগরি জটিলতা দেখা দিলে একদিন বেশি সময় লাগতে পারে। ৩৯তম স্প্যানটি বসানোর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো যাচাইবাছাই ও শেষ ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে।
এদিকে, ১০-১১ নম্বর পিলারের আশেপাশে চলাচলকারী নৌযানগুলো যাতে স্প্যান বসানোর কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত না করে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুইটি বোট সারাক্ষণ সেখানে অবস্থান করছে। নিরাপদ দূরত্ব দিয়ে চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
প্রকৌশলী সূত্রে জানা যায়, গেল মাসেও টার্গেট অনুযায়ী চারটি স্প্যান বসানো হয়েছে সেতুতে। আর ৩৯তম স্প্যানটি বসানো গেলে এ মাসেও চারটি স্প্যান বসানোর টার্গেট সম্পন্ন হবে। চলতি বছরের বিজয় দিবসের আগেই মাওয়া প্রান্তে ৪১তম স্প্যানটি বসার কথা রয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭-৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল। পদ্মাসেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এর মধ্যে বসানো হয় এক হাজার ২৩৯টির বেশি রোড স্ল্যাব। এছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। এরমধ্যে বসানো হয় এক হাজার ৮৪৮টির বেশি রেল স্ল্যাব। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগে মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে তিনটি স্প্যানের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মাসেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২০
এনটি