ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আজ বিশ্ব এইডস দিবস

পাঠান সোহাগ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২০
আজ বিশ্ব এইডস দিবস

ঢাকা: ‘সারা বিশ্বের ঐক্য, এইডস প্রতিরোধে সবাই নিব দায়িত্ব। ’ এই স্লোগানে সারাদেশে আজ বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হবে।

এ উপলক্ষে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দিনব্যাপী কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জন ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকদের নেতৃত্বে আলোচনা সভা ও র‌্যালি হবে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় সকাল সাড়ে নয়টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দক্ষিণপার্শ্বে জমায়েত ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোলের সর্বশেষ ২০১৯ সালের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়ে চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র ৭ হাজার ৩৭৪ জন। এখনও শনাক্তের বাইরে রয়ে গেছে প্রায় ৭ হাজার। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আছে ১০৫ জন।

২০১৯ সালে নতুন করে ৯১৯ জন মানুষের শরীরে পজিটিভ এসেছে। আর এ বছর এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭০ জন।

দেশে এ রোগে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২৪২ জন। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৫৭২ জন, চট্টগ্রামে ২ হাজার ৮ জন, সিলেট বিভাগে ১ হাজার ১৯ জন, খুলনা বিভাগে ৬৬০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯২ জন, বরিশাল বিভাগে ১৭৯ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৬ জন, রংপুর বিভাগে ৬৮ জন রয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, দেশে এখনও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক ০১ ভাগের নিচে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণের হার দুই শতাংশ।

জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের মোট এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৮ মিলিয়ন। এর মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৮ মিলিয়ন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের ২৩টি জেলা বেশি এইডস  ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৯৮৯ সাল থেকে  দেশে এইচআইভি রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে মাসে একজন এইডস আক্রান্ত রোগীর পিছনে সরকারের খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। যেসব জেলা এইডস-এর ঝুঁকিতে এগুলো হচ্ছে- ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেট, মৌলভাবাজার, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুরা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ও সাতক্ষীরা।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (টিবি-এল এন্ড এএসপি) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, আট দশটা ক্রনিক ডিজিজেসের মতো একটা রোগ। এ রোগ একেবারে সেরে যাবে না। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তবে আজকে আক্রান্ত হলে কালকেই যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে সেটা নয়। কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যে কোনো ইনফেকশনেই মৃত্যু হতে পারে। আমরা যে কাজটা করি, ওষুধ দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করি।

অধ্যাপক শামিউল ইসলাম আরো বলেন, সারা দেশে ২৮টি এইচটি সেন্টার আছে। জিন এক্সপার্ট মেশিন এইচআইভি ভাইরাস শনাক্তে কাজ করা হচ্ছে। যেহেতু এ মেশিনটি ইতিমধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, তাই দ্রুত সময়ে বাকিদের শনাক্তের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

এইডস আক্রান্ত জনগোষ্ঠী নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে কুসংস্কার,ভ্রান্তধারণা ও বৈষম্য আছে তা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা আছে এইচআইভি এইডস ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের জীবন যাপন ভালো না। তাদের জীবন যাপন ইসলামিক না। এ জন্য তাদের এইডস হয়েছে। তাদের প্রথমে আঙুল তুলে দেখানো হয়, সে পাপাচার ও পাপি। এ জন্য কুসংস্কার, ভ্রান্তধারণা ও বৈষম্য দূর করতে পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে ইসলামিক প্রোগ্রামগুলোতে এইচআইভি এইডস ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এইচআইভি এইডস ভাইরাসের অবস্থা পরিসংখ্যানগতভাবে অনেক ভালো। তবে এটা যে কোন সময় খারাপ পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে।  

এইডস/এইচআইভি কী: এইচআইভি একটি ভাইরাসের ছোট নাম। হিউমেন ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস থেকে নাম হয়েছে এইচআইভি। এই ভাইরাসটা মানুষের শরীরে সংক্রমণ হলেই রোগ হয়ে যায় না। সংক্রমণ হয়ে রোগ হতে অনেক বছর লাগে। ১০ থেকে ১৫ বছর বা ২০ বছর পর এই রোগ হয়। এজন্য যাদের এইচআইভি আছে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে কোনো রোগ নেই। এই এইচআইভি ইনফেকশনের কারণে যখন কতগুলো লক্ষণ শরীরের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে-সেটা জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, ডায়রিয়া হওয়া, টিবি রোগ হওয়া। এইচআইভির কারণে যখন মানুষের মধ্যে এই রোগগুলো দেখা দেয়, তখন একে এইডস বলে। এর মানে এইচআইভি পজিটিভ কেউ হলেও তার মধ্যে এটি কেরিয়ার (বহনকারী) হিসেবে থাকছে, তখনই এটি রোগ নয়। যখন এটা রোগে পরিণত হচ্ছে, তখন একে আমরা এইডস বলি বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে রিকশাচালকদের মধ্যে একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ লোক এইডস কীভাবে ছড়ায় তা জানে না।  

এইডস/এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম বলেন, এইচআইভি তিনটি পদ্ধতি মানুষের শরীরে ছড়ায়। এই তিনটির বাইরে কোনো পদ্ধতি নেই। এক. দুজন মানুষের শারীরিক মিলনের মাধ্যমে। দুই. ইনজেকশনের মাধ্যমে হতে পারে, ইনজেকশন যদি শেয়ার করে বা রক্ত দেয়ার মাধ্যমে হতে পারে। তিন. মায়ের থেকে সন্তানের হতে পারে। মা যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়, তখন এটি হতে পারে, তাও এর সম্ভাবনা খুব কম। ১০০ ভাগের এক ভাগও নয়, দশমিক পাঁচ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। এই দশমিক পাঁচ শতাংশের মধ্যে পড়ে গেলে সন্তানও এইচআইভি পজিটিভ হতে পারে। এছাড়া শিরায় মাদক গ্রহণকারী, যৌনকর্মী, সমকামী ও হিজড়াদের মধ্যে সংক্রমণে হার বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২০
পিএস/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।