হবিগঞ্জ: শুক্রবার ৪ঠা ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ শহরকে হানাদার মুক্ত করতে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব।
মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা যায়, একাত্তরে পাক বাহিনীর চোরাগোপ্তা হামলায় দিশেহারা ছিলেন নবীগঞ্জের মানুষ। থানা প্রাঙ্গণে বাঙ্কার তৈরি করে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল তারা। বিভিন্ন গ্রামে চালিয়েছিল ধ্বংসযজ্ঞ। সে সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা মুর্শেদ জামান রশীদ ও তার বাহিনী পাক হানাদারদের ক্যাম্পে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ঠা ডিসেম্বর খুব ভোরে শত্রুপক্ষের বাঙ্কার টার্গেট করে মুক্তিবাহিনী। তাদের সঙ্গে গ্রেনেড নিয়ে ক্রলিং করে অগ্রসর হতে থাকেন বীর সৈনিক ধ্রুবও। তখনই শুরু হয় গুলি-পাল্টা গুলির বর্ষণ। গুলিবিদ্ধ হন ৪ সূর্য সন্তান। ঘণ্টাব্যাপী গুলিবিনিময় শেষে ভোরের আলো ফুটার সঙ্গে সঙ্গে আত্মরক্ষার্থে পিছু হঠতে থাকে মুক্তিবাহিনী। তবে পিছ পা হননি সাহসী বীর ধ্রুব। তখনই শত্রুর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় তার বুক। এরপর ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদত বরণ করেন।
তারা আরও জানান, যুদ্ধের পর ধ্রুব’র প্রাণহীন দেহ নবীগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কে দীর্ঘক্ষণ পড়ে ছিল। এরপর একদল সাহসী যুবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনগর গ্রামের একটি স্থানে এনে তাকে দাফন করেন। ৫ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা সাব সেক্টর কমান্ডার মহবুবুর রহব সাদীর নেতৃত্বে পুনরায় আক্রমণ চালিয়ে নবীগঞ্জ শহরকে শত্রুমুক্ত করা হয়েছিল।
একজন টগবগে যুবক। তখনও পর্যাপ্ত হয়নি। অথচ দেশ মাতৃকার টানে অপরিণত বয়সে যুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হলেন। সহযোদ্ধারা খুঁজে পাননি তার পরিচয়ও। তবে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছিলেন ধ্রুব’র বাবা-মায়ের নাম জানতে না পারলেও শ্রীমঙ্গলের কোন একটি চা বাগানে তার জন্মস্থান।
রশীদ বাহিনীর প্রধান মুর্শেদ জামান রশিদ জানিয়েছেন, মৌলভীবাজার ও বাহুবলে যুদ্ধ করেন ধ্রুব। ১৫ নভেম্বর তিনি নবীগঞ্জে এসেছিলেন। গজনাইপুরে ধ্রুব’র গুলিতে চার পাকিস্তানী নিহত হয়।
তিনি আরও জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বর্তমান নবীগঞ্জ থানা গেটের সামনেই ধ্রুব’র নিথর দেহ মাটি চাপা দেওয়া হয়। এরপর থেকে তার স্মৃতি রক্ষার জন্য যুগের পর যুগ দাবি জানিয়ে আসলেও তা করা হয়নি। তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তার স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে না পারলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা কষ্ট পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০২০
জেআইএম