চট্টগ্রাম সাতকানিয়া থেকে: দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন হাসিনা আক্তার বিথি। বিজিবিতে ২০১৬ সাল থেকে সৈনিক পদে নারীদের নিয়োগ শুরু হলেও তাদের মধ্য থেকে ফায়ারিং বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারেননি কেউ।
শনিবার (০৫ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজে (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) ৯৫তম রিক্রুট নবীনদের শপথ গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আনুষ্ঠানিক সর্বমোট ২ হাজার ৫২৪ জন রিক্রুট (নারী-পুরুষ) সৈনিক জীবন শুরু করেন। তাদের মধ্যে সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠ সৈনিক হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেন নবীন সৈনিক মো. খোকন মোল্লা (বক্ষ নম্বর-৪৩১) এবং শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হয়েছেন নবীন সৈনিক হাসিনা আক্তার বিথি (বক্ষ নং-৬৮৭)। এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের (ভিটিসি) মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজের ভাইয়ের কারণে বিজিবিতে যোগদান করেন সৈনিক হাসিনা আক্তার বিথি। মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুব্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে সাহসী এই নারী সৈনিক দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে এবং দেশের জন্য আরও ভালো কাজ করতে চান সৈনিক হাসিনা আক্তার। শনিবার বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে ৯৫তম রিক্রুট নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ শেষে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এমনটাই জানিয়েছন হাসিনা আক্তর বিথি।
‘যারা দেশকে ভালোবাসেন তাদের বিজিবিতে যোগদান করা উচিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য সীমান্ত রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর বিজিবিতে যোগদান করলেই এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করা যাবে’- যোগ করেন সৈনিক হাসিনা আক্তার।
তিনি বলেন, ট্রেনিং কলেজের স্টাফ স্যাররা আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। ফায়ারিংয়ে তারা আমাকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যার কারণে আমি ব্যাচের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হতে পেরেছি।
ফায়ারিংয়ে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ মনে হয়েছে কী না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না। কাজের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সবাই সমান। নারী কেন পারবে না। চেষ্টা থাকলে নারীরাও তাদের লক্ষ অর্জন করতে পারেন। ফায়ারিং প্রশিক্ষণের সময় আমি নিজের সঙ্গে নিজেই প্রতিযোগিতা করেছি। স্টাফ স্যারদের নির্দেশ মেনে প্রতিনিয়ত নিজেকে তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে যাই। আর এটাই ছিলো আমার চ্যালেঞ্জ।
শ্রেষ্ঠ ফায়ারার গৌরব অর্জনের কথা প্রথমেই তার বড় ভাই জানিয়েছেন। এরপর তার মাকে।
ফায়ারিং প্রশিক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। যদি মনে বিশ্বাস আর পূর্ণ মনোযোগ থাকে তবে যে কোনো নারী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খুব সহজেই একজন সেরা ফায়ারার হতে পারবেন। আমি যেহেতু শ্রেষ্ঠ ফায়ারার হতে পেরেছি, তবে অন্য নারীরাও তা পারবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের জানান, ‘মেয়েরা যে ভালো ফায়ারার হতে পারে সেটি প্রমাণিত হলো। আবার নামটাও আমার নামেই, কাজেই আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। ’
প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বিশেষভাবে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আপনার অনুভুতি কেমন? জানতে চাইলে হাসিনা আক্তার বিথি বলেন, আমি অনেক খুশী হয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে পুরস্কৃত করেছেন আমি খুব আনন্দিত। তবে আজ এই অনুষ্ঠানে যদি আমি স্বশরীরে তাঁর হাত থেকে এই পুরস্কারটি নিতে পারলে আমার অনেক বেশি ভালো লাগতো। তবে এই বিষয়টি বর্তমান পরিস্থিতি কারণে (করোনা মহামারি) সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আরও ভালো কাজ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার নিতে চান।
সৈনিক হাসিনা আক্তার বিথি শেরপুরের নকলা থানার হুজুরীকান্দা গ্রামের আনিসুর রহমানের মেয়ে। তিনি ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হুজুরীকান্দা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পরিবারে মা-বাবাসহ এক ভাই ও এক বোন রয়েছে।
তিনি চরমধুয়া আদর্শ বিদ্যা নিকেতন থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি (মানবিক) পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৯১ এবং চৌধুরী ছবরুন নেছা মহিলা কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি (মানবিক) পরীক্ষায় জিপিএ-২.৭৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এ বছরের ১৪ জুন থেকে ০৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত ৯৫তম ব্যাচ রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণে ফায়ারিং এ শ্রেষ্ঠ রিক্রুট হওয়ার গৌবর অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নে (১৯ বিজিবি) কর্মরত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২০
এসজেএ/এমআরএ