ঢাকা: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য নারীর অর্থনৈতিক মুক্তিটা জরুরি। এটা হলেই নারী সব ক্ষেত্রে পুরুষের মত অবদান ও অংশ গ্রহণ করতে পারবে।
রোববার (৬ ডিসেম্বর) কালের কণ্ঠ ও নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) এবং ইউনাইট ফর বডি রাইটস্ (ইউবিআর) বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স আয়োজিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ: বিনিয়োগ ও অংশ গ্রহণ’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পিএসটিসির নির্বাহী পরিচালক ড. নূর মোহাম্মদের সঞ্চালনায় অনলাইন সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।
তিনি বলেন, মা সন্তান জন্ম দেবে কি-না সেই অধিকার বা আমি এখন সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য প্রস্তুত না এটা বলার অধিকার মায়ের নেই। কিন্তু সে মা কত শ্রদ্ধার মা। মা শ্রদ্ধার তখনই হবে যখন তিনি আত্মসম্মান নিয়ে মানুষের মতো বাঁচতে পারবেন। মায়ের পকেটে টাকা নেই। তার পকেটই নেই। মা যখন একটা ওষুধ কিনবে আরেকজনের কাছে যাইতে হয়। কাপড় কিনবে, সমাজের একজন গরীবকে দান করবে তা পারছে না। তিনি তো অন্যের দান দক্ষিণাতে জীবন চালাচ্ছেন। এতে সেই মায়ের ভালোবাসা, সম্মান কিন্তু থাকছে না। সম্মান দিতে হলে মায়ের (মেয়েদের) শিক্ষা দরকার, অর্থনৈতিক ভাবে মুক্তিটা অনেক জরুরি। পলিসি মেকিংয়ে তাদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ থাকতে হবে। যে কোনো পোশাক পরে বের হতে পারবে। সব কথাই বলতে পারবে। এসব জায়গা উত্তরণ ঘটাতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। মা হলো আমাদের সবচেয়ে শ্রদ্ধার। আমরা একদম মাথা নত করে ফেলি আমরা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে। কিন্তু এ শ্রদ্ধাটা কেমন ধরনের। উদাহরণ হিসেবে বলি। মা ঘরের ভেতর থেকে রান্না করে খাবার পাঠাচ্ছে। চা পাঠাচ্ছে। বাইরে বসে ছেলে বা স্বামী মিটিং করছে। মিটিংটা কি হচ্ছে মা কিন্তু জানে না। এ মিটিংটা কি দেশের বিরুদ্ধে নাকি দুর্নীতির পক্ষে হচ্ছে এইটা জানার অধিকার কিন্তু মায়ের নেই। মা সালাম পাচ্ছে, খাবারটা পৌঁছে দিচ্ছে, রান্না ঘরে বসে আছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা লক্ষ্য করছি নারীর প্রতি সহিংসতা হচ্ছে, দীর্ঘদিন আগে আমরা লক্ষ্যটাই করতাম না। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ভাষাগত সমস্যাও রয়েছে। কিছু শব্দ আছে সেগুলো আমরা শুধু মেয়ে-নারীদের বেলায় ব্যবহার করি। ছেলেদের ক্ষেত্রে এসব শব্দের ব্যবহার করা হয় না। যেমন বলা হয় লজ্জা নারীর ভূষন। নারীর সম্ভ্রম। একজন পুরুষ ১০ জন মেয়েকে ধর্ষণ করলেও তাকে কেউ বলবে না এ পুরুষটি সম্ভ্রম হারিয়েছে। বলবে ওই ১০ জন মেয়ে সম্ভ্রম হারিয়েছে। সমাজে কিছু শব্দ শুধু নারীর জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছে। এভাবেই নারীকে ছোট করে রাখা হয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, সব জায়গায় সবাইকে সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদী হতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বলতে হবে যে পুরুষ ধর্ষণ করেছে সেও সম্ভ্রম হারিয়েছে। এসব বিষয় সম্মিলিত ভাবে করতে হবে। এটা আসলে সরকার করে দেবে, আমরা করে দেবো এমন না। বাস্তবে আমরা সবাই মিলিত ভাবে করতে চাই। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নানা রকমের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে নারীদের। মাঠ পর্যায়ে এ কাজে রয়েছে কয়েক হাজার এনজিও। নারীদের বোঝোনো হচ্ছে। কিন্তু বোঝালে কি হবে তারাই তো অনেক বেদনার মধ্যে আছে।
স্বাগত বক্তব্যে কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমরা পুরুষরা যদি আমাদের মনোভাব না বদলাতে পারি তাহলে নারীর প্রতি সহিংসা প্রতিরোধ করা কখনোই সম্ভব না। একজন পুরুষ, একজন মানুষ হিসেবে আমি মনে করি নারীকে প্রথমে তার মর্যাদাটা দিতে হবে। নারী ও পুরুষের ব্যবধানটা মুছে ফেলতে হবে মন থেকে, সমাজ থেকে, রাষ্ট্র থেকে এবং এ পৃথিবী থেকে। আমাদের বুঝতে হবে নারী এ পৃথিবীকে সুন্দর করে, নারী সন্তান জন্ম দেন, নারী আমাদের পথ চলার সঙ্গী এবং নারী আলোকিত করে দেশকে, সমাজকে এবং পৃথিবীকে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ত্রপা মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রফেসর ড. সাইদ শেখ ইমতিয়াজ, ইউএনডিপির প্রতিনিধি মাহতাবুল হাকিম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কাশফিয়া ফিরোজ, পিএসটিসির কানিজ গোফরানী কোরাইশী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ড. আবুল হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২০
এসই/আরআইএস