ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘর আছে, তবুও ফুটপাতে!

জিএম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২০
ঘর আছে, তবুও ফুটপাতে!

ঢাকা: ভাড়া বাসায় থাকার মতো অবস্থা থাকলেও স্ত্রীকে নিয়ে নওগাঁর মান্নানের দিন-রাত এখন কাটছে রাজধানীর ফুটপাতে।

সম্প্রতি রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারে কথা হয় মান্নানের সঙ্গে।

কথার আলাপে উঠে আসে তার দুঃখ গাঁথা।

দুই বছর আগেও মান্নানের (৩৪) সুন্দর জীবন কাটছিল তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর আত্রাই থানার সাদনগর গ্রামে। ভাইদের সঙ্গে থেকে গ্রামে মাছের ব্যবসা করতেন একসঙ্গে। তবে বিয়ের পর সংসারে অভাব দেখা দিলে গ্রামের বাড়িতে আর থাকতে পারেননি তিনি, তাই চলে আসেন ঢাকায়। এরপর সাভারে টুকটাক কাজ করে দু’জনের সংসার ভালই চলছিল একটি ভাড়া বাসায়।

মান্নান বাংলানিউজকে জানান, এক বছর যেতে না যেতেই সারাদেশে শুরু হলো করোনা নামক মহামারি। ঘর থেকে বের হতে পারিনি, দুই তিন মাস কাজ বন্ধ। বাড়ি ভাড়া দিতে পারিনা, কি করব! একদিন রাতে বউয়ের সঙ্গে বুদ্ধি করে বাড়িওয়ালার চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে আসলাম ঢাকায় গুলিস্তান বাবু বাজার এলাকায়।

উদাস চোখে মান্নান বলেন, গুলিস্তানে এসে ভ্যানঠেলার কাজ নিলাম। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ইনকাম। টাকাও জমাতে শুরু করলাম। হঠাৎ একদিন পায়ে ব্যথা পেয়ে আর কাজ করতে পারিনা। যে টাকা গুছিয়ে ছিলাম, অসুস্থতা আর বসে খেয়ে শেষ।

আক্ষেপের সুর জুড়ে তিনি বলেন, টাকার অভাবে বাবার ভিটা ছাড়লাম। সাভারে ভাড়া বাসার ঠাঁই হারালাম। এখন অনাহারে দিন রাত কাটছে হচ্ছে রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারের ফুটপাতে।

এখনকার উপার্জন আর খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে মান্নান বলেন, দুপুরে হাইকোর্ট মাজারের তাবারক খাই দু’জনে মিলে। এরপর হাইকোর্টের আশেপাশে ফুটপাতে বসে-শুয়ে দিন-রাত পার করি। আমাকে কেউ ভিক্ষা দিতে চায় না, আমিও ভিক্ষা করতে চাইনা। কিন্তু আমি যে কোন কাজ করবো, তাও করতে পারিনা!

কথায় কথায় জলে চোখ ভারী হয় মান্নানের। প্রশ্ন জাগে, রাতে ও সকালে কি খেয়ে খাকেন? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মান্নান বলেন, ‘কেউ যদি ১০/২০ টাকা দেয় তাহলে কিছু কিনে খাই। আর না হলে পরের দিন দুপুরে আবার হাইকোর্ট মাজারে তাবারকের অপেক্ষায় থাকতে হয়! এভাবেই আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি। কে দেখবে আমাদের মতো অসহায় মানুষগুলোকে!’

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
কেএআর/এইচএমএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।