নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার স্থানীয় ঝাউগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার ৫৩৩ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে তিতাস গ্যাস টিঅ্যান্ডডি কোম্পানির লিমিটেড।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটক ৯ ব্যক্তিকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে পাঠিয়েছে।
এর আগে রোববার (৬ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে মামলাটি দায়ের করেন তিতাসের যাত্রামুড়া রূপগঞ্জ জোনাল বিপণন কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. মিজবাহ-উল- রহমান। এ মামলায় ৩৩ ব্যক্তির নামোল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ শতাধিক গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে গ্রেফতার এড়াতে উত্তরপাড়া গ্রামটি এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারের পুরো সদস্যই এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে, নিরীহ অনেক ব্যক্তিকেই মামলায় আসামি ও গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখিত বিবরণ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ হোসেনের নেতৃত্বে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উজ্জ্বল হোসেন, আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত শওকত হোসেন, তিতাস গ্যাসের যাত্রামুড়া জোনাল কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. মেজবাহ-উল-রহমান তিতাসের বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করতে অভিযানে অংশ নেয়। দুপুর দেড়টার দিকে অভিযান চলাকালে উল্লেখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ৪-৫ শতাধিক গ্রামবাসী বাধা দেয়। একপর্যায়ে এক ব্যক্তি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়।
এতে লোকজন এলোপাথাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় গ্যাসের বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পুলিশের ৮ সদস্য আহত হয়। এ সময় বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে উপজেলা ইউএনও সোহাগ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) উজ্জ্বল হোসেনের নির্দেশে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ৭৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হওয়া ইয়াছিনের মা ফিরোজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় ভাই ভাই স্পিনিং মিলের শ্রমিক। সে ছুটির পর শ্রমিক বহনের গাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরছিল। রাস্তা থেকে পুলিশ তাকে আটক করে মামলায় নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমার ছেলে নির্দোষ। আমি তার মুক্তি চাই।
একই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া কামরানীর চর এলাকার আরিফের বাবা শাজাহান বলেন, আমার ছেলে কর্মস্থল থেকে ফেরার সময় রাস্তা থেকে পুলিশ আটক করে মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমার ছেলে নির্দোষ। সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না।
ঝাউগড়া এলাকার মাহিম ইসলাম আকাশের পরিবারের লোকজন বলেন, আকাশ আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাকে শোবার ঘর থেকে পুলিশ আটক করে মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না।
ঝাউগড়া এলাকার এক যুবক নাম নাপ্রকাশের শর্তে বলেন, ঝাউগড়া উত্তপাড়া এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ধারী স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ৪৫০টি পরিবারের কাছ থেকে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিতে উৎসাহিত করেছেন। এখন মামলার আসামি হয়েছে নিরীহ গ্রামবাসী।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই গ্রেফতার এড়াতে পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারেরই সব সদস্যরা এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আড়াইহাজার থানার (ওসি তদন্ত) শওকত হোসেন বলেন, নির্দোষ কেউ যেন হয়রানি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার বাদী প্রকৌশলী মো. মিজবাহ-উল-রহমান বলেন, একই এলাকায় চলতি বছরের ১০ নভেম্বর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অবৈধভাবে একই সংযোগ আবারও নিয়ে কিছু অসাধু লোকজন ব্যবহার করছিল। এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুনরায় অভিযান চালানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২০
এএটি