সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের উত্তর রমজাননগরে মাদার নদীর চর দখলের হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে স্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করে বাঁধ দিয়ে প্রায় ১০ একর জমি দখল করেছে প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রমজাননগর মৌজার ১০০, ১০১ দাগের ১ নম্বর খতিয়ানের ১০ একর জমি বেড়িবাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, রমজাননগরের উত্তরপাড়া গ্রামের লুৎফার গাজীর ছেলে মোস্তফা গাজী (বাবলু), ইব্রাহিম গাজীর ছেলে নজরুল গাজী, মজিবার গাজী, মৃত মান্নান গাজীর ছেলে ইদ্রিস গাজী, মৃত আব্দুল গফুর গাজীর ছেলে ইসমাইল গাজী, মৃত মোহাম্মদ আলী গাজীর ছেলে এশার আলী গাজী, শহর আলী গাইনের ছেলে আক্তার আলী গাইন, রহমাত আলী গাইন, দাউদ আলী গাইন, মৃত আব্দুল হান্নান গাজীর স্ত্রী আছিয়া বেগম, শাহাবুদ্দিন গাজীর ছেলে জুল ঢালী এবং ভৈরবনগর গ্রামের সুধীর মণ্ডলের ছেলে কেনা মণ্ডল, মৃত ফেরাসতুল্ল্যাহ গাজীর ছেলে নুরুল ইসলাম ও মেসের আলী গাজীর ছেলে আমজাত অবৈধভাবে মাদার নদীর চর দখল করে মৎস্য ঘেরের উপযোগী করে তুলছে।
সূত্রের দাবি, শুধু ঘের নয়, দখলদাররা নিজেদের পৈত্রিক ভিটা বিক্রি করে মাদার নদীর চর দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে মাদার নদীর চর দখলের হিড়িক পড়লেও নীরব রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে দখলকারীরা জানিয়েছেন, পূর্বে তাদের ডিসিআর ছিলো। তারই ইস্যু ধরে নতুন করে নদীর চরে ড্রেজিং মেশিনের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘেরের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। তবে এটা যে অবৈধ, তাও স্বীকার করেছেন তারা।
কৈখালী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সুধীন কুমার বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। বিষয়টি শোনার পরে অফিসের স্টাফ পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। যদি অবৈধ হয়ে থাকে তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্যামনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, উত্তর রমজাননগরে মাদার নদীর চর দখলের বিষয়টি শোনার পর আমি স্থানীয় নায়েবকে বলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা লির্ডাসের পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল বলেন, জলবায়ু সুরক্ষা ও নদীগর্ভ সুরক্ষার জন্য বনভূমি একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় যে বিশাল বনভূমি রয়েছে এটি বাংলাদেশের একটি সম্পদ। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে নদীর চরে বনভূমি তৈরি হয়েছে কিন্তু সেই বনভূমি ধ্বংস করে কিছু প্রভাবশালী অসাধু ব্যক্তি নদীর চর দখল করে মৎস্য ঘের প্রস্তুত ও পরিচালনা করে আসছে। যেমন প্রশাসনের অগোচরে উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের উত্তর রমজাননগর গ্রাম সংলগ্ন মাদার নদীর চর দখল করছে। সেখানের বন কেটে ড্রেজিং মেশিনের মাধ্যমে বেড়িবাঁধ দিয়ে দখলের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি এমন ভাবে চর দখল চলতে থাকে তবে আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলাকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে নদীর চর দখল মুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২০
আরএ