ঢাকা: বেগম রোকেয়াকে বাংলার নারী জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বেগম রোকেয়াকে তুলে ধরার জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন স্মরণে ‘রোকেয়া মানস’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সেমিনারটির মাধ্যমে বেগম রোকেয়া সম্পর্কে বহুল প্রচলিত কিছু বিভ্রান্তির নিরসন ঘটেছে। আমরা জানতাম, বেগম রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে রয়েছে তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেনের বড় অবদান। প্রকৃতপক্ষে সেটি সত্য নয়। বরং বেগম রোকেয়ার সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত হওয়ার পেছনে রয়েছে তার বড় ভাই-বোনদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েদের গৃহের অর্গলমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না। তবু রোকেয়া দমে যাননি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি নিজেকে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখেন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং রোকেয়া হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে বেগম আকতার কামাল বলেন, রোকেয়া মানসের মূল ভিতটি রূপ পেয়েছে পরিপার্শ্বের সাথে চেতনার দ্বন্দ্ব সংক্ষোভের মধ্য দিয়ে। ঊনিশ শতকীয় রেনেসাঁসের ভাবাবহে লালিত সচেতন ব্যক্তিমানসের আত্মজিজ্ঞাসা তার জীবনকে নতুন প্রজ্ঞায় তৈরি করবার আকাঙ্ক্ষাই প্রধান শক্তি। রোকেয়ার সময়কাল ও তার ব্যক্তিত্বই তাকে উৎসারিত করেছে। মুসলমান অভিজাত সমাজের আন্তঃপুরের অন্ধকার জীবন থেকে উন্মুক্ত আলোর জগতে টেনে এনেছে। রোকেয়ার স্বভাব ছিল নিজের পথসন্ধানে উন্মুখ। নিজ মানস তৈরির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় নারীমুক্তি ও সমানাধিকার চেতনার উদাহরণ তিনি লাভ করেছিলেন ইংরেজি সাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়ে। নারীর দৈহিক রূপের চেয়ে ব্যক্তিত্বের রূপ মূর্তিই ছিল রোকেয়া মানসের চিন্তাকেন্দ্র।
অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, অসীম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন বেগম রোকেয়া। তৎকালীন সময়ের পিছিয়ে পড়া নারীদের অধিকাংশ ছিল মুসলিম নারী। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, নারীদের স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর ও সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনের মূলমন্ত্র হলো নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানো। বেগম রোকেয়া সবসময় নারীদের লিখতে বলতেন। কেননা নারীদের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য নারী শিক্ষার পাশাপাশি নারীদের লিখতে হবে। লেখার মাধ্যমে নারীর অধিকার তুলে ধরতে উৎসাহিত করতেন।
আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বেগম রোকেয়া বাংলার নারী জাগরণের স্বপ্নদ্রষ্টা। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বেগম রোকেয়াকে তুলে ধরার জন্য। নারীদের সক্ষমতা আছে, কিন্তু আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ