ঢাকা: পদ্মা সেতুর পূর্ণতায় নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক জীবনযাত্রার মানে উন্নতি হবে এই অঞ্চলের মানুষের।
বাড়তি মানুষের বোঝা থেকে অনেকাংশেই মুক্ত হবে ঢাকা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের স্টিল কংক্রিটের এই সেতু বদলে দেবে রাজধানী ও দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর চাকা।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) সর্বশেষ স্প্যানটি বসে পদ্মা সেতুতে। ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের মাঝে বসা ৪১তম এই স্প্যানে দৃশ্যমান হলো বিশ্বের ১১ তম দীর্ঘ পদ্মাসেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মূল কাঠামো। আর এতে স্বপ্ন দেখছেন রাজধানীসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি মানুষ।
দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষেরা বলছেন, পদ্মা সেতুর ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে তাদের সড়ক যোগাযোগ বাড়বে। ট্রেন চলাচল শুরু হলে রেল সংযোগে যাতায়াত ব্যবস্থা হবে আরও সাশ্রয়ী। ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প কারখানা নির্মাণ এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছেন তারা। এসব অবকাঠামোতে কর্মসংস্থান হবে অত্র অঞ্চলের লাখো পেশাজীবীর।
একই সঙ্গে রাজধানীতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা বিভিন্ন পেশাজীবীও উপকৃত হবেন পদ্মা সেতুর কারণে। একটি বেসরকারি জরিপ মতে, প্রায় পৌনে দুই কোটির মানুষের ঢাকায় প্রায় অর্ধেকই এখানে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে থাকেন। তাদের মধ্যে আবার অর্ধেক বৃহত্তর দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা।
সে হিসেবে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন রাজধানীতে। এমনি এক তরুণ পেশাজীবী নুরে আলম। ফরিদপুরের ভাঙ্গার বাসিন্দা নুরে আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমার অফিস যাত্রাবাড়ীতে। কিন্তু আমার পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। ঢাকায় চাকরি করি বলে এখানে থাকতে হয়। পদ্মা সেতু হলে ভাবছি বাড়িতে চলে যাব। সকালে ঢাকায় এসে আবার সন্ধ্যায় বাড়ি যাব। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে আমাদের বাড়ি প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরত্বে। সেতু হলে মাত্র এক ঘণ্টায় এই দূরত্ব পাড় করা যাবে। আমার মতো অনেকেই পদ্মার ঐ পাড়ের আশেপাশের জেলায় যাদের বাড়ি তারাও উপকৃত হবেন।
প্রায় একই রকম সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরাও। ফরিদপুরের এক ব্যবসায়ী আজাদ শেখ বলেন, আমার এখানে রড সিমেন্টের দোকান। পদ্মা সেতু তৈরির কাজ শুরু থেকে এদিকে বাড়ি ঘর বা কারখানা তৈরির হার বেড়েছে। আমার দোকানের মালপত্র বিক্রির অনুপাত থেকে বলছি। আশেপাশে আগের থেকে অনেক বেশি কারখানা গড়ে উঠতে দেখছি। সেতু হলে নাকি এখানে পণ্য বানিয়ে রাজধানীসহ উত্তরবঙ্গে পাঠানো হবে। এমনটা হলে খুব ভাল হয়। এদিকের ছেলে-মেয়েদের চাকরি হবে। আয়-রোজগার বাড়বে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়েছিল। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজন হবে ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। এছাড়া ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো হবে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বসানো স্প্যানগুলোতে এসব স্ল্যাব বসানো হচ্ছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মাসেতুর কাঠামো। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২০
এসএইচএস/জেআইএম