নাটোর: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) দেওয়া লাইসেন্সধারী প্রায় ২ শতাধিক ব্যাটারিচালিত মিশুক, পালকি, বউগাড়ি এখন নাটোর শহর দখল নিয়েছে। নাটোর পৌরসভা থেকে কোনো লাইসেন্স না নিয়েই দেদারছে চলছে এ সব যানবাহন।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) নাটোর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অনেক গাড়িতেই লাইসেন্স নেই। আবার অনেক গাড়িতেই রাসিকের দেওয়া লাইসেন্স লাগানো আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাসিকের এলাকায় যে সমস্ত গাড়ির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, সেই গাড়িগুলোই নাটোর শহরে প্রবেশ করেছে এবং ওই নম্বর প্লেট ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু পৌরসভা থেকে কোনো তদারকি নেই। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত ১ বছর থেকে এ সব গাড়ি নাটোর শহরে আসতে শুরু করে এবং চলাচল করছে বলে দাবি করেছেন অনেকেই। এ সব গাড়িগুলো মিশুক, পালকি ও বউগাড়ি বলে পরিচিত। ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দামের এ সব গাড়ি রাজশাহী থেকে কিনে এনে নাটোর শহরে রাসিকের দেওয়া লাইসেন্স দিয়েই অবাধে চলাচল করছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নাটোর শহরে অটোরিকশার সংখ্যা ক্রমাগত হারে বাড়ছে। তার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজটও। শহরের মাদ্রাসা মোড়, নিচাবাজার ছায়াবানী মোড় ও স্টেশন বাজার এলাকায় গেলেই যানজটের পরিমাণ আরও বেশি চোখে পড়ে।
পথচারী হাবিবুর রহমান, লিমন হসেন ও ফটিক অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, অটোরিকশা, অটোবাইক, মিশুকের কারণে নাটোর শহরের রাস্তা পারাপার কঠিন হয়ে পড়েছে। দেখলে মনে হবে, মানুষের চেয়ে যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। রাস্তা দিয়ে চলাচল কিংবা পারাপারের সময় এ সব গাড়ি অনেক ক্ষেত্রে গায়ের ওপর ওঠার উপক্রম হয়। আবার অনেকে দুর্ঘটনারও শিকার হন। তাই এ বিষয়ে পৌরসভা ও প্রশাসনের গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
এদিকে শহরের রথবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, গত ২ মাস আগে রাজশাহী শহর থেকে ৪৮ হাজার টাকায় আমি মিশুক কিনে আনি। পরে নাটোর পৌরসভা থেকে কোনো লাইসেন্স করা হয়নি। তবে এ ব্যাপারে পৌরসভা থেকেও কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। রাসিকে দেওয়া রেজিস্ট্রেশন দিয়েই আমাদের কাজ চলছে।
শহরের হাজরা এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ৮ মাস আগে রাজশাহী থেকে ৫০ হাজার টাকায় পালকি গাড়ি কিনেছি। নাটোর পৌরসভা থেকে কোনো লাইসেন্স নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে পৌরসভার থেকেও কেউ কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি। তাই রাসিকের দেওয়া লাইসেন্স অনুযায়ী নম্বর প্লেট ব্যবহার করছি।
নাটোর শহরে ভাড়া খাটতে আসা নলডাঙ্গা উপজেলার ঠাকুরলক্ষকোল গ্রামের বাসিন্দা মো. জাহিদ হোসের বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে পৌরসভাকে দিতে হয়। নাটোর পৌরসভা থেকে কোনো লাইসেন্স না দেওয়ায় রাসিকের দেওয়া লাইসেন্সই ব্যবহার করছি।
নাটোর পৌরসভা লাইসেন্স পরিদর্শক মো. সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, নাটোর শহরের অধিকাংশ গাড়ির কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। সারা শহর মিলে মাত্র ২ হাজার যানবাহনের লাইসেন্স আছে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ যানবাহন লাইসেন্স হয়েছে। প্রায় ১ হাজার যানবাহনের কোনো লাইসেন্স নেই।
তিনি বলেন, অটোরিকশার চাকা চিকন বা সরু তাই লাইন্সে দেওয়া হয় না। এছাড়া ব্রেক নাই এবং প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এ সব যানবাহন। এমন যানবাহনের সংখ্যা রয়েছে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০টি। এদের সরকারিভাবে কোনো অনুমোদন নেই। তবে পৌরসভা থেকে প্রতিটি অটোরিকশার ভ্যাট বাদে ১ হাজার টাকা করে লাইসেন্স দেওয়া হয়।
রাসিকের লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানোর প্রসঙ্গে মো. সেলিম রেজা আরও বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে পৌর মেয়রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তীকালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাটোর পৌরসভার একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নাটোর শহরে অন্তত ৩ হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত গাড়ির লাইসেন্স নেই। এ সব গাড়ির লাইসেন্স করার ব্যাপারে পৌরসভা থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এতে করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরসভা। তাছাড়া লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর সুযোগ দেওয়াও একটা অপরাধ। অনেক চোরাই গাড়ি শহরে চলাচল করছে। বিষয়টার প্রতি নজর দেওয়া উচিত।
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, রাসিকের দেওয়া লাইসেন্সধারী কিছু ছোট ছোট যানবাহন নাটোর শহরে চলাচল করছে, এমন খবর শুনেছি। বিষয়টি লাইসেন্স পরিদর্শককে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য হয়েছে। তবে দারিদ্র্যতার কথা বিবেচনা করে অনেকের কাছ থেকেই লাইসেন্স বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হয় না।
মেয়র আরও বলেন, অনেক বেকার যুবক এ সব ছোট যানবাহন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করেই যানবাহনগুলোর মালিকদের কাছ থেকে কোনো টোল বা লাইসেন্স বাবদ টাকা আদায় না করতে বলা হয়েছে।
তবে বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেবেন বলেও জানিয়েছেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
এসআরএস