ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হরিপুরের দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ি মসজিদ (ভিডিও)

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
হরিপুরের দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ি মসজিদ (ভিডিও) মসজিদ-এ-নওয়াজিস। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: কাগজে-কলমে নাম “মসজিদ-এ-নওয়াজিস” হলেও “জমিদার বাড়ি মসজিদ” নামেই এলাকায় বেশি পরিচিত। গ্রামীণ মনোরম পরিবেশে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন।

সেই সঙ্গে স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও মসজিদটিতে নামাজ পড়তে আসেন অনেকে।  

সিরাজগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ-কামারখন্দ আঞ্চলিক সড়কের পাশে সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কালিয়া হরিপুর জমিদার বাড়ির পুকুর পারে মসজিদটির অবস্থান। বাইরে থেকে তেমন কিছু না বোঝা গেলেও মসজিদটির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে স্বচ্ছ পানির গভীর মাঝারি আকারের একটি পুকুর। পুকুরের পশ্চিম পাড়েই স্থাপিত হয়েছে ‘‘মসজিদ-এ-নওয়াজিস’’ নামের দ্বিতল মসজিদটি।  

আকারে খুব একটা বড় না হলেও মসজিদটির অপরূপ নির্মাণশৈলীতে মুগ্ধ হবে যে কেউ। পুকুরের পানির মধ্য থেকে গেঁথে তোলা হয়েছে মসজিদটি। মসজিদের সামনের অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির সিঁড়িগুলো শেষ হয়েছে পুকুরের তলদেশে গিয়ে। সিঁড়ির ওপরে উঠলেই দেখা যায় মসজিদ প্রাঙ্গণটি সম্পূর্ণ টাইলসে করা। পুকুরের পূর্বপাড়ে অর্থাৎ মসজিদের সামনে ওপাড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সিঁড়ি। ওই সিঁড়ির উপরিভাগে করা হয়েছে দর্শনীয় ফটক। এছাড়া পুকুরের চারদিকের পাড় সবুজ ঘাসে সাজানো হয়েছে। মসজিদকে ঘিরে সব স্থাপনা সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে মসজিদের প্রতিবিম্ব দেখা যায়। যা পুরো দৃশ্য আরো মোহনীয় করে তোলে।  

ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ কওমি জুটমিলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক হবিরর রহমান ও ওয়াজেদ আলী, মুদি দোকানদার ওমর ফারুকসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃটিশ আমলে কালিয়া হরিপুর গ্রামের শ্যামশঙ্কর মৈত্র নামে এক জমিদার ছিলেন। পাকিস্তান আমলে ওই জমিদারের বংশধরেরা তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি ডা. নওশের আলী তালুকদারের কাছে বিক্রি করে ভারতে পারি জমান। এরপর থেকে ওই সম্পত্তি ডা. নওশের আলী তালুকদার ও তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশরা ভোগদখল করতে থাকেন।  

প্রায় ২৫ বছর আগে ডা. নওশের আলীর বড় ছেলে নওয়াজিস আলী জমিদার ওই পুকুরপাড়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তখন থেকেই মসজিদ-এ-নওয়াজিস নামে নামকরণ করা হয় এটির।  

ডা. নওশের আলী তালুকদারের সন্তানদের কেউ কেউ আমেরিকায় ও কেউ ঢাকায় থাকেন। তারা এলাকার বাইরে থাকলেও ডা. নওশের আলী তালুকদার ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার দুঃস্থ-অসহায় মানুষদের কল্যাণে কাজ করছেন। এরই অংশ হিসেবে প্রায় দেড় বছর আগে এ মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করে সংস্কার করা হয়।  

মসজিদের কেয়ারটেকার আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা দু’জন সার্বক্ষণিক মসজিদটির দেখভাল করি। প্রতিদিন দু’বেলা মসজিদ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।  

হরিপুরের দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ি মসজিদ

মসজিদের পেশ ইমাম শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ১৩ বছর ধরে এ মসজিদটিতে নামাজ পড়াচ্ছি। বর্তমানে দৃষ্টিনন্দন হওয়ার কারণে দিন দিন এখানে মুসল্লিদের সংখ্যা বাড়ছে। আড়াইশ’ মুসল্লি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ মসজিদ জুমার নামাজের দিন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসল্লি নামাজ পড়েন।  

তিনি বলেন, আমি ও মুয়াজ্জিনসহ এখানে তিনজন দায়িত্বে আছি। আমাদের বেতনসহ মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের সম্পূর্ণ টাকা ডা. নওশের আলী তালুকদার ফাউন্ডেশন থেকেই দেওয়া হয়। কখনোই কারো অনুদান নেওয়া হয় না। এছাড়া ডা. নওশের আলী তালুকদার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটে দুঃস্থ অসহায়দের সহায়তা করা হয়।  

ডা. নওশের আলী তালুকদারের ছেলে জুলফিকার হায়দার বলেন, কালিয়া হরিপুর এলাকায় প্রায় এক একর জমির পুকুর এবং ওই পুকুরপাড়েই মসজিদটি স্থাপন করেছি। কয়েক ধাপে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর সঠিক ব্যয়ের পরিমাণ আমরা নির্ধারণ করিনি।  

তিনি বলেন, কালিয়া হরিপুর এলাকায় একটি বয়স্ক চিকিৎসালয় খোলার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যেখানে বয়োবৃদ্ধ অসহায় মানুষ বিনামূলে চিকিৎসাসেবা পাবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।