ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মা সেতু: খুলনা হবে দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
পদ্মা সেতু: খুলনা হবে দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী

খুলনা: প্রমত্তা পদ্মার ওপর স্বপ্নের সেতু এখন সম্পূর্ণ দৃশ্যমান। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক সুতোয় গেঁথে দৃষ্টি সীমায় পূর্ণ রূপে ভেসে উঠেছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো।

যা দেখে মুগ্ধ-অভিভূত দেশবাসী। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে এর সঙ্গে যোগাযোগ হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার। একই সঙ্গে দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে এ অঞ্চলের মানুষের। এছাড়া এ  অঞ্চল সবচেয়ে হবে বেশি লাভবান।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর সংযোগ শুধু যাতায়াতের বিষয় নয়, এটা আমাদের সক্ষমতাকে প্রমাণ করে। বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। পদ্মা সেতুর সব স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন। কোনো ষড়যন্ত্র পদ্মা সেতুর নির্মাণে বাধা হতে পারেনি। এ সেতুর মাধ্যমে উত্তর ও পূর্বের মানুষের সঙ্গে দক্ষিণের মানুষের যোগাযোগ স্থাপন হবে। একই সঙ্গে খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠবে।

তিনি বলেন, সব প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থে এ সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীর সাহস, দৃঢ়তা, মনোবল, দূরদর্শীতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপলাভ করতে পেরেছে। সেতুর একচল্লিশতম স্প্যান বসায় এখন পদ্মার দুই তীর তথা দেশের দুটি বৃহৎ ভূ-খন্ডের সংযোগ সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতু উন্নয়নের মাইল ফলক যা এদেশের মানুষের কাছে নতুন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশিদের মতে, দেশের বৃহত্তম এ সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীসহ অন্যান্য অংশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। দেশের ওই অঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব গড়ে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমবে। স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার গতিশীলতা বাড়বে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মোংলাবন্দরের মাধ্যমে রফতানি ও আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন। দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাটশিল্প যার অধিকাংশ খুলনা থেকে রফতানির মাধ্যমে আয় হয়ে থাকে। পদ্মা সেতু হলে এ আয় আরও বাড়বে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বেনাপোল, দর্শনা ও ভোমরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতির গতি সৃষ্টি হয়েছে।

সেতু তৈরির সমীক্ষায় বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি বাড়বে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। মোংলাবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু অর্থনীতিতে যেমন প্রভাব ফেলবে, সহজ হবে মানুষের চলাচলও।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষিণ জনপদের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকেই আশঙ্কা করছিল বিশ্বব্যাংক সরে গেলে পদ্মা সেতু আর হবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ শক্তি, অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও বর্তমান সরকারের দৃঢ়তায় এমন একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। দক্ষিণের মানুষ এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে মোংলা ও খুলনা। এ অঞ্চলের মানুষসহ গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে।

খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, পদ্মা সেতু হলে সুন্দরবনে পর্যটক বেশি আসবে। হোটেল ব্যবসা জমজমাট হবে। এ অঞ্চল নতুন শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হবে। অনেক তৈরি পোশাক কারখানা গড়ে উঠবে। আবাসন ব্যবসা দ্রুত বিস্তার পাবে। এসব ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসাও গড়ে উঠবে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার গতিশীলতা বাড়বে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মোংলাবন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এ বন্দরও এক বৃহত্তম বন্দরে রূপান্তরিত হবে। এমনকি ভূটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশের জন্য পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
এমআরএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।