সিরাজগঞ্জ: শীত বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সিরাজগঞ্জ শহরের ফুটপাতে বসা পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার চড়া দাম হওয়ায় শীতবস্ত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন যমুনাপাড়ের দরিদ্র মানুষরা।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের পৌর হকার্স মার্কেট ও এসএস রোড ও বাজার স্টেশন স্বাধীনতা স্কয়ার চত্বরে বসা পুরাতন শীত কাপড়ের দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় চোখে পড়ে। শুধু নিম্নবিত্ত নয় মধ্যবিত্ত ক্রেতারাও ঝুঁকছেন এসব দোকানে।
বিক্রেতারা জানান, পুরাতন কাপড়ের মধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার, চাঁদর, লং কোর্ট, মাফলার, হাত মোজা ও পা মোজা বিক্রি করেন তারা। কম মূল্যের নতুন কাপড়ও বিক্রি করেন কেউ কেউ। এ বছর শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। এখানে কৃষি দিনমজুর, তাঁতশ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালকরাই বেশি আসেন। এছাড়াও মধ্যবিত্তরা ও নিম্ন মধ্যবিত্তরাও আসেন।
পৌর হকার্স মার্কেট থেকে একটি পুরাতন জ্যাকেট কিনে ফিরছিলেন রিকশাচালক জোবদুল শেখ। তিনি বলেন, ‘কুয়াশার মইধ্যে ভোরবেলায় রিকশা নিয়্যা বাইর অই। শীতে কাহিল অইয়া যাই। ভাবছিলাম দুই থেকে আড়াইশোর মধ্যে একটো জ্যাকেট কিনমু। এহেনে আইস্য দেহি ডবল দাম। শীতের মধ্যেও কাম করাই লাইগবো। তাই ৪শ ট্যাহা দিয়্যা জ্যাকেটটো কিনা নিয়্যা যাইত্যাছি’।
তাঁত শ্রমিক সেলিম হোসেন বলেন, ‘ছওলডার জইন্য একটা সুইট্যার (সোয়েটার) আর বউয়ের জন্য একটো পুরান চাদর কিনব্যার আচিলাম। কিন্তু যে দাম দেইখত্যাচি আইজক্যা আর কিনব্যার পারমু না’।
খোকশাবাড়ী এলাকার কৃষি দিনমজুর সোলেমান আলী এস এস রোডের একটি ফুটপাতের দোকান থেকে তার সন্তানের জন্য একটি সোয়েটার, মাফলার ও হাতমোজা নিয়ে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘ছওয়ালের শীতের কাপড় কিনল্যাম-এক হপ্তা পর আবার আইস্যা নিজের আর বউয়ের জন্য কিনমু’।
কথা হয় ফুটপাতের শীতকাপড়ের দোকানে আসা মুদি দোকানদার আব্দুল্লাহ, অটোরিকশা চালক মোস্তফা, আলাউদ্দিনসহ অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, বড় বড় শো-রুমে সুন্দর সুন্দর শীতের পোশাক ঝুলিয়ে রেখে গলাকাটা দাম রাখে। তাইতো আমরা ফুটপাতের দোকানে আসি। এখানে পুরাতন কাপড়ও মেলে-সেই সঙ্গে কিছু কিছু সুন্দর নতুন কাপড়ও পাওয়া যায়।
শহরের এস এস রোডে ফুটপাতের ওপর পুরাতন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসা দুলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শীত এখনও তেমন না পড়লেও ক্রেতাদের অনেক ভিড় শুরু হয়েছে। আমরাও চাহিদামতো কাপড় দোকানে তোলার চেষ্টা করছি। বড়দের কাপড়ের পাশাপাশি শিশুদের কাপড়ও বেশ বিক্রি হচ্ছে।
স্বপন শেখ নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, আমরা শীতের মৌসুমেই এই পুরাতন কাপড়ের ব্যবসাটা করি। এই কয়েক মাসের আয় দিয়ে আমাদের সারা বছরই চলে। ৩০/৩৪ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। কিন্তু এ বছর দোকানে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাই ফিরে যাচ্ছেন।
পৌর হকার্স মার্কেটের পুরান কাপড় বিক্রতা নাজিম উদ্দিন জানান, দোকানে প্রচুর ভিড় আছে। আমরা ক্রেতাদের চাহিদা মত কাপড় আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে পুরাতন কাপড়ের গাট্টির দাম অনেক বেশি। অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবার শীতের কাপড়ের চাহিদা বেশি। গভীর রাতেও ক্রেতার ভিড় কমছে না। বাধ্য হয়েই রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে।
জেসমিন তালুকদার নামে আরেক দোকানি বলেন, এখানে দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষগুলোই বেশি আসেন। তবে মধ্যবিত্ত ও কিছু উচ্চবিত্তের মানুষও বর্তমানে আমাদের মার্কেটে আসছেন।
তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই তাপমাত্রা কমছে। মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। বুধবার তা কমে ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
এমআরএ