ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক নির্ভরতায় সন্তুষ্ট শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক নির্ভরতায় সন্তুষ্ট শেখ হাসিনা

ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দিই।  

বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) দ্বিপাক্ষিক ভার্চ্যুয়াল বৈঠক এবং কয়েকটি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

 

ভার্চ্যুয়াল এ বৈঠকে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নয়াদিল্লি থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অংশ নেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতা আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দিই। আমি বিশ্বাস করি, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐকমত্যের সুযোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা রেখেছে। এছাড়া আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশে তিনি বলেন, মাত্র কয়েক মাস আগে, আপনাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী আমরা উদযাপন করেছি। বাংলাদেশে আমরা বাপুজির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে একটি বিশেষ ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছি। আমরা আজ বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ভারতের ডাক বিভাগের একটি স্ট্যাম্পের উদ্বোধন করবো।  

তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবাখাতে নিযুক্ত রয়েছেন এবং তারা নিজ দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটক এবং চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীকে ভারত গ্রহণ করে থাকে।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের চলমান যোগাযোগের উদ্যোগগুলো এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো ‘চিলাহাটি-হলদিবাড়ি’ রেল সংযোগ পুনরায় চালু করা- যা আমরা আজ উদ্বোধন করছি।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিশ্ব এক মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন এবং মানবজাতি কীভাবে এ অজানা শত্রুর মোকাবিলা করে, সে পরীক্ষার মুখোমুখি। লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, জীবন-জীবিকা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, অর্থনীতি হয়েছে শ্লথ, বিঘ্নিত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা। সম্ভবত কোভিড-১৯ মহামারির সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ হলো মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। এ বছরের গোড়ার দিকে ঢাকায় আপনাকে স্বাগত জানানোর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে। তবু আমাদের গত শীর্ষ সম্মেলনের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী, এ ক্রান্তিকালে উভয় পক্ষের সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে- তা প্রশংসাযোগ্য।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত ও জনবহুল অঞ্চলে কোভিড-১৯ যেভাবে আপনার সরকার মোকাবিলা করেছে, তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজগুলো ছাড়াও, ‘আত্মনির্ভর ভারত’- এর উদ্যোগে প্রবর্তিত অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলোও প্রশংসনীয়। আমরা বিশ্বাস করি, আপনার নেওয়া নীতিমালার মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশেও আমরা এ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব উপশম করতে ১৪.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। মার্চের গোড়ার দিকে আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরে আমরা আড়াই কোটিরও বেশি মানুষকে সহায়তা দিতে সামাজিক সুরক্ষার আওতা সম্প্রসারিত করেছি।

মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটা এবং ভোক্তাদের চাহিদা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

দুই দেশের যোগাযোগ বাড়াতে উভয় দেশের নেওয়া উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সাল জুড়ে রেলরুট দিয়ে বাণিজ্য, উচ্চ-পর্যায়ের পরিদর্শন ও সভা, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারতীয় পণ্যের প্রথম পরীক্ষামূলক চালান পাঠানো এবং অবশ্যই, কোভিড-১৯ বিষয়ে সহযোগিতার মতো বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।

গেল বছর নিজের ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। ২০১৯ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লীর গ্র্যান্ড হায়দ্রাবাদ হাউসে আপনার সঙ্গে আমার শেষ বৈঠক এবং আপনার অপূর্ব আতিথেয়তা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করছি। তারপর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।

করোনা পরিস্থিতি ভালো থাকলে আগামী ২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশে উপস্থিতি প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে একত্রিত হওয়ার জন্য আপনাকে এবং আপনার সরকারের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র স্মরণে আমরা বিশ্বব্যাপী বাছাই করা কিছু শহরে আগামী বছর জুড়ে যৌথ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় আপনার উপস্থিতি আমাদের যৌথ উদযাপনের গৌরবময় স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখবে।

বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মানুষ আনন্দ, মুক্তি এবং উদযাপনের চেতনায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; যাঁর গতিশীল নেতৃত্বে আমরা মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং নির্যাতনের শিকার দুই লাখ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
এমইউএম/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।