ঢাকা: বৈশ্বিক করোনা মহামারি এবং ব্রাজিলে চলমান করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেও যথাযথ শ্রদ্ধা ও মর্যাদায় পরিমিত পরিসরে ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রাজিলিয়ান সংবাদকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রাজিলের পরারষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ব্রাসিলিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা এবং ব্রাসিলিয়ার কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
মহান বিজয় দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে এ দূতাবাসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে দূতাবাসে 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার' -এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। একই সঙ্গে তিনি দূতাবাসে একটি 'বঙ্গবন্ধু কর্নার'ও উন্মোচন করেন। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকান অঞ্চলে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার এ জনকূটনীতির প্রয়াস বাংলাদেশ ও এতদ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।
এ অঞ্চলের জনগণের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করতেও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার অবদান রাখবে।
দূতাবাসের উদ্যোগে লাতিন আমেরিকার প্রখ্যাত ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়ার' প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্প্রতি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জনকূটনীতির এ অনন্য সিদ্ধান্তের বিষয়েও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বঙ্গবন্ধুর লেখা ঐতিহাসিক গ্রন্থ 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় অনুবাদ করবেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেসে মুদ্রিত হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দু’টি জনকূটনীতি উদ্যোগের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পাঠাগার উদ্বোধন ব্রাজিলে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে ব্রাজিলিয়ান গবেষকদের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ সংযোজন বলে মত প্রকাশ করেন অভ্যাগত ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ।
জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সূচিত মহান বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সমাগত অতিথিবৃন্দ এবং দূতাবাস পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। পবিত্র কোরান থেকে পাঠ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, মহান ভাষা আন্দোলনসহ গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সব শহীদ এবং ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবার আত্মার মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করা হয়। সেই সঙ্গে বিদ্যমান করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর মানুষকে রক্ষায় বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এরপর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো ভিডিও বাণী সম্প্রচার করা হয়।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে দূতাবাসের কর্মকর্তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং দেশজুড়ে গণহত্যা ও পাশবিক নির্যাতনের বেদনাময় ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করেন। পাশাপাশি বিশ্বসভায় বাংলাদেশের এ রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় অবদানের ওপর তারা আলোচনা করেন।
দূতাবাস পরিবারের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দূতাবাসের মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির পরিসমাপ্তি ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
টিআর/এসআই