টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলাজুড়েই রয়েছে উন্নয়নের ছোঁয়া। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে রয়েছে জমিদার বাড়ি, বিনোদন কেন্দ্র।
কিন্তু এতকিছু হওয়ার পরও অনিয়ম আর দুর্নীতি থেমে নেই ধনবাড়ী পৌরসভায়। এ পৌরসভার মেয়র ও তার নিজস্ব ঠিকাদারদের কারণে পৌরবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছেন। আর এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে পৌরবাসীর সুবিধার জন্য রাস্তা-ঘাট না করেই তুলে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তবে কাগজে-কলমে রাস্তা পাকা।
২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ধনবাড়ী পৌরসভার ঠিকাদারের সংখ্যা ছিল ১৪৮ জন। বর্তমান মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন দায়িত্ব গ্রহণের পর তার ঘনিষ্ঠ আকন্দ এন্টারপ্রাইজ, সরকার এন্টারপ্রাইজ, খন্দকার এন্টারপ্রাইজ, মাজেদা এন্টারপ্রাইজ এবং পৌরসভার প্রকৌশল শাখার কার্য সহকারী কর্মচারীকেও ঠিকাদার মাজেদা এন্টারপ্রাইজ বানিয়ে মেয়র নিজেই দরপত্র আহ্বান করেন। আবার সেই কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন ও ঠিকাদারের ভূমিকায় নিজেই প্রকল্প সম্পাদন করে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন।
কনস্ট্রাকশন আরসিসি রোড কলেজ ভায়া দর্জি রোড টু এইচ/ও ফরিদ ভেন্ডার চেনেজ ২১৭ মিটার রাস্তার (ড্রেনসহ) টেন্ডার আহ্বান করে পৌরসভা। যার টেন্ডার আইডি নম্বর ৩৯২২৩১। এর চুক্তি মূল্য ধরা হয় ৭৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪০৮ টাকা। কাজের শেষ সময় ২০২০ সালের ১৪ জুলাই। কাগজে-কলমে রাস্তার পুরো কাজ শেষ। বতর্মান মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপনের ছোট ভাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খন্দকার ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমানকে বিলও পরিশোধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন ওই রাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ ৭/৮ বছরে রাস্তার কোনো কাজই হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ পৌরসভার লোকজন এসে গত চার বছর ধরে শুধু রাস্তা মাপ-জোক করে যাচ্ছে। কিন্তু রাস্তা পাকা করা বা ড্রেন নির্মাণ কোনোটিই এখন পর্যন্ত করা হয়নি।
ধনবাড়ী কেন্দুয়া রোড টু বনিচন্দবাড়ী এইচ ও হাকিম আলী চেনেজ ৫০০ মিটার বিটুমিন ড্রেস কারপেটিং করার দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার টেন্ডার আইডি নম্বর ৩৯২২৩৬। এর চুক্তি মূল্য ধরা হয় ৮২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৪ টাকা। কিন্তু এ রাস্তায় শুধু মেকাটাম করা (ইটের খোয়া ফেলা) হয়েছে। তারপরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেয়রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আকন্দ এন্টারপ্রাইজকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এছাড়া একই প্যাকেজে কনস্ট্রাকশন আরসিসি রোড নিজ বর্ণি এইচ/ও আজাদ বকল টু পলাশতলী রোড চেনেজ ৩০০ মিটার রাস্তার কোনো কাজই করা হয়নি। একই অবস্থা কনস্ট্রাকশন আরসিসি রোড লিচু বাগান প্রতিবন্ধী স্কুল এইচ/ও আক্তারুল ইসলাম চেনেজ ২৯০ মিটার রাস্তার। স্থানীয়দের অভিযোগ এই রাস্তা কমপক্ষে ১০/১২বার মেপে গেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজই করেননি। তারাও নাকি জানতে পেরেছেন তাদের এই রাস্তার কাজের টাকা উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে।
ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকার আনকনস্ট্রাকশন আরসিসি রোড তেঁতুলতলা চালাষ পূর্বপাড়া এইচ/ও নুরুল আমিন চেনেজ ১৯০ মিটার রাস্তা কাগজে কলমে অনেক আগেই শেষ, বরাদ্দের টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে। টেন্ডার নম্বর ৩৯২২৭৪। যার চুক্তি মূল্য ছিল ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ১৭৭ টাকা।
সরোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, গত ৩/৪ বছর আগে এ রাস্তার দুই পাশে শুধু ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি করা হয়েছে। এরপর এ রাস্তায় আর কোনো কাজই হয়নি।
কনস্ট্রাকশন আরসিসি রোড ঢাকা-জামালপুর ভায়া পাঠানবাড়ি টু ধনবাড়ী চেনেজ ৩০০ মিটারের রাস্তায় শুধু দুই পাশে ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি ছাড়া কিছুই করা হয়নি। এছাড়া বিলাসপুর হানিব মোড় টু বিলাসপুর মিন্টু রহমান চেনেজ ৪০০ মিটার বিটুমিন ড্রেস কারপের্টিং করার কথা থাকলেও সেখানে নামেমাত্র মেকাটাম করা (ইটের খোয়া ফেলা) হয়েছে। টেন্ডার নম্বর ৩৯২২৭৩। যার চুক্তি মূল্য ৫৭ লাখ ৯৯ হাজার ৬০৩ টাকা। তবে কাগজে-কলমে পুরো রাস্তার কাজ শেষ দেখানো হয়েছে। শুধু কাজ শেষ নয়, বরাদ্দের টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাজেদা এন্টারপ্রাইজকে।
এ বিষয়ে ধনবাড়ী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন বাংলানিউজকে জানান, রাস্তার কাজ যে যতটুকু করেছে তাকে সেই টুকু কাজের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তবে কেউ কাজ না করে টাকা নেননি। প্রকৃতপক্ষে পৌরসভায় এখন কোনো বরাদ্দ আসেনি। যে রাস্তার কাজ এখনো হয়নি সেগুলোর বরাদ্দ এলে কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০২০
আরএ