নাটোর: আজ সোমবার (২১ ডিসেম্বর) নাটোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নাটোরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নাটোরে বড় ধরনের কোনো লড়াই না হলেও একাধিক স্থানে গণহত্যা চালানো হয়। পাক বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, শুকলপট্রি, মল্লিকহাটি, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, ধানাইদহ বাজার, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরে গণহত্যা চালায়। ৩ জুন নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস ও হৃদয়বিদারক ঘটনা।

দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে শহরে যৌথভাবে বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর জেলা কমান্ডের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড। শোভাযাত্রা শেষে স্বাধীনতা চত্বরের স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক নবীউর রহমান পিপলু বাংলানিউজকে জানান, ১৬ ডিসেম্বর দেশের অন্যান্য অঞ্চল মুক্ত হলেও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পাকিস্তানি সেনারা নাটোরে এসে জড়ো হতে থাকে। শহরের পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরের (উত্তরা গণভবন) ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া পাকিস্তানি সেনারা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় ২০ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত।

ফলে ২১ ডিসেম্বর নাটোর পুরোপুরি শত্রমুক্ত হয়। আত্মসর্মপণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ মিত্রবাহিনীর ১৬৫ মাউনটেন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করেন।  এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫১ অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, ৫৫০০ সেনা, ১৮৫৬ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য  এবং ৯টি ট্যাংক, ২৫টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩টি ছোট অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। নাটোরে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদিন ধরে শহরে চলে বিজয় মিছিল আর মুক্ত আকাশে গান ফায়ার। ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয় সারা শহর।

তৎকালীন বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নাটোর মুক্ত দিবসকে (২১ ডিসেম্বর) ‘রেড লেটার ডে’ হিসেবে অভিহিত করা উচিত। কারন পাঁচদিন ধরে রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষার পরে বিজয়ের এই আনন্দ পেয়েছিল নাটোরবাসী। তাই এই দিনটি বেশি গৌরবের, বেশি আনন্দের।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২০
এমএইচএম