মানিকগঞ্জ: প্রথম ধাপে আসন্ন ২৮ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচন। তবে এ নির্বাচনে তেমন কোন উৎসব বা আমেজ পাচ্ছেন না পৌরসভার ভোটাররা।
শেষ মুহুর্তের প্রচার প্রচারণায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা, তবে বড় দুই দলের মেয়র প্রার্থী থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে দেখা গেলেও বিএনপির মনোনিত ধানের শীষ প্রতিকের প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছে না মাঠে। এমন কি তার পোস্টারও দেখা মিলছে না পৌরসভায় সবগুলো এলাকায়। কিন্তু নির্বাচনের উৎসবের আমেজ রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায়।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ৪৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৫ জন সংরক্ষিত (নারী) কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৮ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ২৫টি কেন্দ্রের ১৪৫টি কক্ষে ৫৫ হাজার ২০২ ভোটারের ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটারদের মধ্যে ২৬ হাজার ৯৩৬ জন পুরুষ ও ২৮ হাজার ২৬৬ জন নারী।
সকাল থেকে মধ্যরাত পযর্ন্ত পৌরসভার অলিতে গলিতে মাইক দিয়ে প্রার্থীদের প্রচারণার কাজ চলছে। আবার প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় ঝুলছে তাদের ছবি যুক্ত পোস্টার। সকল পৌর সভার ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অন্য দিকে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী (নৌকা প্রতিক) রমজান আলী দলীয় নেতা কর্মী ও আম জনতাকে নিয়ে নানা স্থানে উঠান বৈঠক ও বাজার পাড়া মহল্লায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। কিন্তু নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে পারছে না বিএনপির প্রার্থী (ধানের শীষ) প্রতিকের আতাউর রহমান আতা। এমনটাই অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তবে যে কোন ধরনের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন নির্বাচন অফিস।
পৌরসভার বেওথা এলাকার সাইফুল ইসলাম নামের এক ভোটার বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর প্রথম ভোটার হয়েছি তবে এর আগের নির্বাচন গুলোও দেখেছি। অনেকেই নির্বাচনের আগে নানা ধরনের আশ্বাস দেন কিন্তু ভোটে জয় পাওয়ার পর আর কোন খোঁজ খবর থাকে না সে জন্য এবার বুঝে শুনে এক জন সৎ প্রার্থীকে নির্বাচিত করবো।
জয়রা এলাকার আতিয়া নামের এক নারী ভোটার বলেন, কোন প্রার্থীর কাছে কোন সময় টাকা পয়সার জন্য যাবো না, তবে যেই নির্বাচত হোক তার কাছে একটাই প্রত্যাশা তারা যেন পৌরসভার উন্নয়নের কথা ভেবে কাজ করেন। মানিকগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেনির হলেও দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি গত কয়েক দশকে। তবে এবার যে নির্বাচিত হবে তার উচিৎ হবে একটি মডেল পৌরসভায় গড়ে পৌরবাসীকে উপহার দেওয়া।
সেওতা এলাকার দিন মজুর জামাল মিয়া বলেন, নির্বাচন এলে কাউন্সিলর-মেয়র প্রার্থীদের দেখা যায়, নির্বাচন শেষ হলে আর দেখা মিলে না তাদের, তখন তারা ভোটে জিতে ভগবান হয়ে যায়। আমরা যারা সাধারণ ভোটার তারা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হই, আর এ কারণে আমাদের ভোটের প্রতি দিন দিন অনিহা জন্মাচ্ছে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী (ধানের শীষ) প্রতিকের আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিএনপির কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের লোক জন। এর আগে আমার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুরও করেছে। সে কারণে আমি নির্বাচন অফিসে লিখিত অভিযোগও করেছি। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বিপুল ভোটে জয় লাভ করবো।
সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রমজান আলী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি প্রার্থীকে দেখলে পৌর সভার ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নেয় সে কারণে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর আগেও পৌরবাসীর ভালোবাসায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম আশা করছি এবারও তাদের ভালোবাসায় নির্বাচিত হতে পারবো।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা রিটার্নিং অফিসার শেখ মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কিছু কিছু প্রার্থী আমার কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এছাড়া পৌরসভার নির্বাচনের জন্য প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছি এবং নির্বাচনের সকল মালামাল জেলা নির্বাচন অফিসে এসে পৌঁছেছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
কেএআর