ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সীমান্ত হত্যা রোধে স্পর্শকাতর এলাকায় বিজিবি-বিএসএফ যৌথ টহল 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
সীমান্ত হত্যা রোধে স্পর্শকাতর এলাকায় বিজিবি-বিএসএফ যৌথ টহল 

ঢাকা: সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে থাকা স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স’র (বিএসএফ) যৌথ টহল কার্যকর করতে এক মত প্রকাশ করেছেন দুই দেশের সীমান্ত বাহিনীর প্রধানরা।

এছাড়াও দু’দেশের ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিসহ প্রয়োজনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়ার বিষয়েও উপনীত হন তারা।

 

ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের অনুষ্ঠিত ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত রক্ষায় এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বিজিবি-বিএসএফ’র মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ে এ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে বিজিবি’র মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে অংশ নেন। এদিকে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র মহাপরিচালক শ্রী রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন সম্মেলনে।  

শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) উভয় দেশের ডিজি পর্যায়ে আলোচনা শেষ সীমান্ত সম্মেলন হয়েছে। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিজিবি’র প্রতিনিধিদল ভারতের গৌহাটি থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।

সম্মেলনের বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।  
                               
সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ, ভারতীয় নাগরিক, দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত, মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সর্বদা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সুসম্পর্কের প্রশংসা করে। তারা প্রত্যাশা করে বিজিবি এবং বিএসএফ সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদের হত্যার না কে হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

সীমান্তে হত্যার ঘটনা কমিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছেন বিএসএফ মহাপরিচালক। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই সীমান্তে জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদারকরণ, দুর্গম অঞ্চলে যথাযথ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সমন্বিত টহল বৃদ্ধি করে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একমত হন।

এদিকে, বিজিবি মহাপরিচালক ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করেন বিএসএফ মহাপরিচালককে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওই সব আস্তানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তসীমান্ত অপরাধ যেমন- মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, গবাদি পশু, জালমূদ্রা, স্বর্ণ প্রভৃতি চোরাচালানের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসব অপরাধ দমনের জন্য বিএসএফ’র সহযোগিতা কামনা করেন।  

এ বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে দু’দেশের যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে যা উভয়ের জন্যই বিপদজনক। এটাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা দরকার। এ ব্যাপারে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে। চোরাকারবারীদের সম্পর্কিত এমন তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হন।

প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক এবং বিএসএফ সদস্যরা প্রায়শই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যা দু'টি বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে- এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক উদ্বেগ প্রকাশ করেন।  

এসময় তিনি উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। তখন উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম, সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সীমান্তের নিয়মনীতি বজায় রাখার ব্যাপারেও আশ্বাস দেওয়া হয়।

চলিত বছরের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনে (ভার্চুয়ালি) ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলার পদ্মা নদীর ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার নিরীহ পথের অনুরোধ বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ মহাপরিচালককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন।

উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপে সম্মত হয় বিজিবি-বিএসএফ। দুই দেশের বাহিনী উভয়কে আগে থেকে অবগত করা ছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে পারস্পরিক সম্মতি দেয়।

সম্মেলনে বিজিবি ও বিএসএফ উভয় মহাপরিচালক সম্মেলনের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। উভয়েই সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। উভয় পক্ষ মহাপরিচালক পর্যায়ের পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন আগামী এপ্রিল ২০২১-এর দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা ডিসেম্বর ২৫, ২০২০
এসজেএ/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।