খুলনা: পৌষের কনকনে শীত। তার সাথে যোগ হয়েছে কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস।
জীবন যুদ্ধে হার না মানা হেকমোত আলী শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলানিউজকে জানান তার জীবন যুদ্ধের গল্প।
হেকমোত আলী বলেন , আমার গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস গ্রামে। গ্রামে থাকা অবস্থায় কৃষি কাজ করতাম। ১৯৭২ সালে খুলনা শহরে এসে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেছি অনেক বছর। ২০১৫ সালে একটি দুর্ঘটনায় আমার বাম পা ভেঙে যায়। অনেক অর্থ ব্যয় করেও পা আর পুরোপুরি ভালো হয়নি। আমার ছয়টি মেয়ে কোনো ছেলে নেই। সবার বিয়ে হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, মেয়েদের বিয়ে দিয়ে বর্তমানে স্ত্রীকে নিয়ে নগরীর বানরগাতী এলাকার সিটি গার্লস কলেজের পাশে বাসা ভাড়া করে থাকি। পা ভেঙে গেলে তার চিকিৎসা করতে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেনা হয়ে যায়। পা ভাঙার পরে সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি আর করতে পারিনি। তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কি করে চলবে বাকি জীবন। এরপর ৭২ হাজার টাকা খরচ করে ইজিবাইকের আদলে ইঞ্জিন চালিত রিকশাটি বানিয়ে রাস্তায় নেমে পরি। প্রতিবন্ধীত্ব আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারও কাছে হাত না পেতে নিজের জীবিকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। সেই থেকে এগিয়ে চলার অদম্য শক্তি নিয়ে এখনও ইঞ্জিন চালিত রিকশা চালাচ্ছি।
হেকমোত বলেন, এক পা পঙ্গু হয়েও নিজের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে সুস্থ-সবলদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি বয়স কোনো বিষয় না। বার্ধক্যতা কোনো বাধা নয়। ভিক্ষা কোনো সম্মানের কাজ নয়। পা ভাঙার পর তখনই হয়তো আমার জীবন থেমে যেতে পারত। কিন্তু সাহস আর ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এখনও এগিয়ে চলছি। কারো কাছে হাত পাতছি না। তবে অনেক যাত্রী এ বয়সে কাজ করতে দেখে ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা ভাড়া দেন।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর মনে হয়েছিল আমার জীবন শেষ। চরম হতাশায় ভুগছিলাম বেশ কিছু দিন। কেউ স্বাভাবিক আচরণ করত না আমার সঙ্গে। কিন্তু আমি একটা সময় উপলদ্ধি করলাম জীবনটা এখানেই শেষ হয়ে যায়নি, কিছু করার সুযোগ এখনও রয়েছে। যেহেতু আমার কোনো ছেলে নেই। যতদিন বেঁচে আছি নিজের জীবিকার ব্যবস্থা নিজেকে করতে হবে। এরপর থেকে আমি ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করি।
প্রতিদিন কত টাকা আয় হয় জানতে চাইলে হেকমোত বলেন, বিকেলে ও রাতে ইঞ্জিন চালিত এ রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ২০০-৩০০ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে দুই জনের ভালোই চলে। তবে জামাই মেয়েরা আসলে এ টাকায় চলতে একটু কষ্ট হয়।
বয়স্কভাতা পান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বছর আগে থেকে বয়স্কভাতা পাই।
তিনি বলেন, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেনার মধ্যে ১ লাখ শোধ করেছি। এখনও ৩০ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। এটা শোধ করতে পারলে বাঁচতাম। আমার বিশ্বাস আছে আয় করে এ টাকাও শোধ করে দিতে পারবো ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬ , ২০২০
এমআরএম/এমএমএস