ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বপ্নেও ভাবিনি নিজের একটা পাকা বাড়ি হবে

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২১
স্বপ্নেও ভাবিনি নিজের একটা পাকা বাড়ি হবে

শরীয়তপুর থেকে ফিরে: ‘আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। নিজের কোনো জায়গা-জমি নেই।

পরের বাড়িতে থাকি। স্বপ্নেও কোনোদিন ভাবিনি সরকার আমাকে একটা ঘর দেবে। আমার নিজের একটা পাকা বাড়ি হবে। এ শেষ বয়সে পাকা বাড়িতে ঘুমাতে পারবো। ’
   
কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ৭০ বছর বয়সী আছিয়া বেগম। আছিয়ার পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে। পাঁচ মেয়ে বিয়ের পর পরিবার নিয়ে অন্যত্র বসবাস করে। দুই ছেলে ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।  

আছিয়া বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করি। মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় আমার জীবন চলে। মানুষের দেওয়া ভাঙা বাড়িতে অনেক কষ্ট করে থাকছি। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে, ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভেজা ঘরে অনেক কষ্টে থাকছি। আমি যে একটা পাকা বাড়ি পাবো সেটা কোনোদিন ভাবিনি। আমি নামাজ পড়ে শেখ সাহেবের জন্য দোয়া করবো। তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার জন্যও দোয়া করবো।

অপরদিকে ৬৫ বছর বয়সী হানিফ মাতুব্বর এক সময় ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে ১০ বছর আগে গ্যাংরিনের কারণে তার ডান পায়ের নিচের অংশ ও ডান হাতের আঙুল চিকিৎসা করে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হয়। এরপর থেকেই তার পরিবারের অভাব-অনটন-দুর্দশা আরও বেড়ে যায়।  হানিফের তিন মেয়ে, এক ছেলে। নাতি-নাতনিসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে আটজন। তার পরিবারে বর্তমানে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি হচ্ছেন তার ছেলে।  

অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন হানিফ। ছেলের সামান্য উপার্জনে যেখানে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই কষ্টের, সেখানে নিজের একটা বাড়ির কথা ভাবাটাও অকল্পনীয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তিনিও একটি পাকা বাড়ি পেতে যাচ্ছেন।  

ঘর পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমি কখনও ভাবিনি আমার নিজের জমিতে বাড়ি থাকবে। আমি অনেক খুশি আমার নিজের জমিতে একটা পাকা বাড়ি হবে। নিজের পাকা বাড়ি হবে এটা আমার কাছে স্বপ্নের চেয়েও বেশি পাওয়া।  

জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী শিকদার বলেন, আগামী জানুয়ারিতে জাজিরা উপজেলায় মোট ৫৪টি পরিবারকে পাকা বাড়ি দেওয়া হবে। এরমধ্যে ৩০টি বাড়ির ১০০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি ২৪টির ৮০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষের পথে রয়েছে।  

শুধু আছিয়া বেগম ও হানিফ মাতুব্বর নয়, শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য সরকার মুজিববর্ষ উপলক্ষে ৬৯৯টি পাকা ঘর নির্মাণ করেছে।

দুই শতক জায়গার উপরে নির্মিত প্রতিটা ঘরের নির্মাণ ব্যয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘরের সঙ্গে একটি রান্নাঘর, একটি সংযুক্ত টয়লেট ও ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রাখা হয়েছে। পাকা ঘরের দুই শতক জমির মালিকানাও পাবেন উপকারভোগী ব্যক্তিরা।  

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ তিন সংস্থার সমন্বয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশে সরকারের খাস জমিতে প্রায় ৬৬ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ করছে। এসব ঘরের কাজ এরইমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘরগুলো উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২১
আরকেআর/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।