ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে ফিরেই ঘুষের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বঙ্গবন্ধু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
দেশে ফিরেই ঘুষের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ঢাকা: দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন রোসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজনও ঘুষ খাবেন না, আমি ক্ষমা করবো না।

পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরির গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, যুবক শ্রেণি যারা আছে তারা চাকরি না পেলে বা কাজ না পেলে এই স্বাধীনতা পূর্ণতা পাবে না।

দীর্ঘ ৯ মাস পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) পর্যন্ত ছিল জনসমুদ্র। প্লেন থেকে নেমে মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। আবেগাপ্লুত ও কান্নাজড়িত কণ্ঠেই তিনি রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে ভাষণ দেন।

সদ্য স্বাধীন জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রায় ১৭ মিনিটের ওই গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে ছিল বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে তার দিক নির্দেশনা।
ভাষণের শুরুতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, স্মরণ করি আমার বাংলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সিপাই, পুলিশ, জনগণকে, হিন্দু, মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমি আপনাদের কাছে দুই একটা কথা বলতে চাই।

বঙ্গবন্ধু বলেন, আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না। যদি এ দেশের মা-বোনেরা ইজ্জত ও কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।

তিনি বলেন, যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন, আমি সমস্ত জনগণকে চাই, যেখানে রাস্তা ভেঙে গেছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দাও। আমি চাই জমিতে যাও, ধান বোনাও, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজনও ঘুষ খাবেন না, আমি ক্ষমা করবো না।
ভাষণে তিনি বলেছিলেন, এই বাংলাদেশে হবে সমাজতন্ত্র ব্যবস্থা, এই বাংলাদেশে হবে গণতন্ত্র, এই বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।

দেশের উন্নয়নে কাজ করা এবং শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি দেখায় দেবার চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালি রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালি শান্তি বজায় রাখতেও জানে। আজ আমার কারও বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা নাই, একটা মানুষকে তোমরা কিছু বলো না, অন্যায় যে করেছে তাকে সাজা দেবো। আইনশৃঙ্খলা তোমাদের হাতে নিও না।

বঙ্গবন্ধু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি। ’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালি যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি, তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালির বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।
‘আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।

এই ভাষণে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান ভারত সরকার, সে দেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানান সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের প্রতি। তিনি মার্কিন জনগণকেও ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি ভারতের সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টিও তুলে ধরে বলেন, যারা জানতে চান আমি বলে দেবার চাই, আসার সময় দিল্লিতে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যে সময় আলোচনা হয়েছে। আমি আপনাদের বলতে পারি, আমি জানি তাকে। তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। সে পন্ডিত নেহেরুর কন্যা, সে মতিলাল নেহেরুর ছেলের মেয়ে। তারা রাজনীতি করছে। ত্যাগ করছে। তারা আজকে সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে।

যেদিন আমি বলব সেই দিন ভারতের সৈন্য বাংলার মাটি ছেড়ে চলে যাবে এবং আস্তে আস্তে কিছু সৈন্য সরায়ে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
এসকে/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।