ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তুর্কি রাষ্ট্রদূতের চট্টগ্রাম সফর সম্পন্ন

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
তুর্কি রাষ্ট্রদূতের চট্টগ্রাম সফর সম্পন্ন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান চট্টগ্রাম সফর করেছেন

ঢাকা: ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান গত ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধান বন্দরনগরী এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রাম সফর করেছেন।

বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ৪৭ মিনিটে ঢাকার তুরস্কের দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

দূতাবাস জানায়, ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রদূত তুরানের নেতৃত্বে তুর্কি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর, তুর্কি সংস্থাগুলোর বিনিয়োগের জন্য অনেক সুযোগ আছে। আশা করা যায়, নামকরা তুর্কি এলপিজি কোম্পানি আয়গাজ এটি করতে প্রথম হবে। একই সকালে রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মাহবুবুল আলমসহ পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধিদল নবনির্মিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চিত্তাকর্ষক ভবনটি পরিদর্শন করে। তুরস্ক চট্টগ্রাম বাণিজ্য মেলার পরবর্তী সংস্করণগুলোর একটিতে অংশীদার দেশ হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করতে প্রয়াস চালাবে।

একই দিনে রাষ্ট্রদূত তুরান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালে এ কে খান গ্রুপ নির্মিত শামসেন নাহার খান হল পরিদর্শন করেন এবং এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একাডেমিক সহযোগিতার আওতায় বিভিন্ন সম্ভাবনার বিষয়ে অনুষদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

চট্টগ্রাম সফরের দ্বিতীয় দিনে রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান এ কে খান পেনফ্যাব্রিক কোম্পানি লিমিটেড (একেপিএন) কারখানা পরিদর্শন করেন, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য অনুকরণীয় প্রকল্প। তিনি কারখানার বাগানে তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সংহতির প্রতীক হিসেবে একটি গাছ রোপণ করেন।   তুরস্কের প্রতিনিধিদল কোটস (বিডি) কারখানাটি পরিদর্শন করে, যেখানে একেপিএন কারখানায় উৎপাদিত সুতাগুলো রঙিন করে সারাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় পাঠানো হয়। কোটস টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের জন্য চিত্তাকর্ষক প্রতিশ্রুতি দেয় এবং উৎপাদনশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে আইওটি প্রযুক্তি নিয়োগ করে।

রাষ্ট্রদূত তুরান টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অরডিনেশন এজেন্সি (তিকা) ঢাকা অফিসের কর্মসূচি সমন্বয়কারী ইসমাইল গুনদোউদু এবং প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মুঘল সাম্রাজ্য কালীন নির্মিত ঐতিহ্যবাহী শাহী জামে মসজিদ পরিদর্শন করেন, যা ১৬৬৬ সাল থেকে চট্টগ্রামের মুসলমানদের সেবা করছে। তুরস্কের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি সুলেইমান দেমিরেল ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ মসজিদটি পরিদর্শন করেন এবং মসজিদের অভ্যন্তরে ব্যবহার করার জন্য তিনি ঝাড়বাতি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি ইয়াসির আরাফাত ও নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে বাংলাদেশের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেসময় বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।

পরবর্তী কর্মসূচি অনুযায়ী রাষ্ট্রদূত তুরান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দুবাশের সঙ্গে নগর পরিকল্পনা ও অবকাঠামো নির্মাণে তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের উপায় অনুসন্ধান সংক্রান্ত একটি ফলপ্রসূ বৈঠক করেন। উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শহরের পাইপলাইনে রয়েছে, যা তুরস্কের বিনিয়োগকে আকর্ষণ করতে পারে। রাষ্ট্রদূত তুরানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল তিকার মাধ্যমে সংস্কার করা নাজমিয়ে দেমিরেল স্বাস্থ্য ক্লিনিকও পরিদর্শন করে। তুরান কোভিড-১৯ এর সময় স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে পুরো ভবনটি সে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার আহ্বান জানান। তিকা শিগগিরই স্বাস্থ্য ক্লিনিকটির সংস্কারকাজ সম্পন্ন করবে।

এ.কে. খান ইউসিইপি টেকনিক্যাল স্কুল এবং এ.কে. খান ও সিআরপি চট্টগ্রাম কেন্দ্র পরিদর্শনকালে তুর্কি প্রতিনিধিদল দক্ষতা বিকাশে এবং প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে চলমান প্রকল্পগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। কর্মীদের নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্ব দ্বারা প্রভাবিত  সফল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তুর্কি দূতাবাস সহযোগিতা করার উপায়গুলো সন্ধান করবে। ঢাকায় ফেরার পথে রাষ্ট্রদূত তুরান ১৯৯৯ সালে তুরস্কের মহান নেতা মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের নামানুসারে ফেনী জেলায় স্থাপিত আতাতুর্ক মডেল উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার সময় রাষ্ট্রদূত আবারও তুরস্কের আন্তরিক প্রশংসা পুনর্বার নিশ্চিত করেন।

রাষ্ট্রদূতের চট্টগ্রাম সফরকালে তুরস্কের সম্মানিত কনসাল জেনারেল সালাহউদ্দিন কাসেম খান, বাণিজ্যিক কাউন্সেলর কেনান কালায়জি, টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অরডিনেশন এজেন্সি (তিকা) ঢাকা অফিসের কর্মসূচি সমন্বয়কারী ইসমাইল গুনদোউদু এবং দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ও প্রেস কাউন্সেলর গিজেম আয়দিন এরদেম সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০২১
টিআর/এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।