ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বান্দরবানে বাড়ছে ফুলের চাষ

কৌশিক দাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২১
বান্দরবানে বাড়ছে ফুলের চাষ

বান্দরবান: বান্দরবানে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ বেড়ে চলেছে। স্থানীয় ফুলপ্রেমিদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে নানা রকমারি এ ফুল।

কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে।  

এদিকে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে কৃষকদের নানা ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষিবিভাগ।

ফুল সৌন্দর্য আর শুভতার অনন্য প্রতীক। জন্মদিন, গায়ে হলুদ, বিয়ে ছাড়াও যেকোন শুভ কাজে বা অনুষ্ঠানে প্রয়োজন হয় ফুলের। কিন্তু বান্দরবানে একসময় ফুলের চাষ খুব একটা ছিল না। বিগত বছরগুলোতে বান্দরবানের ফুলের চাহিদা মেটাতে হতো পার্শ্ববর্তী সাতকানিয়া, পটিয়া ও চট্টগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এখন বান্দরবানে বিভিন্ন ছাদবাগান, নার্সারি আর বাড়ির আঙিনায় হচ্ছে ফুলের চাষ। সেই ফুল বিক্রি করে তারা করছে অর্থ উপার্জন।  

জেলা সদরের বিভিন্নস্থানে এখন গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, সূর্যমুখী, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন দেশি বিদেশি ফুলের চাষ শুরু হয়েছে আর বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এতে খরচের তুলনায় লাভ বেশি আর বিক্রি বাড়ায় খুশি ফুল চাষিরা।
বান্দরবানের ডিসি বাংলো সংলগ্ন ফুলচাষি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী মো. আইয়ুব বাংলানিউজকে বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে আমি বাড়ির ছাদে ফুল বাগান করছি। আমার বাগানে জবা, গাদা, গোলাপসহ দেশি বিদেশি অসংখ্য ফুলের চারা সংগ্রহে রয়েছে।

তিনি বলেন, ফুল বাগানে এ পর্যন্ত আমি দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। বাগানের ফুল ফোটা দেখে আমার মন আনন্দে ভরে ওঠে।

শখের বশে পারভেজ আক্তার ছাদ বাগান করেছিলেন, এখন সেই শখ থেকে তিনি ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছেন। পারভেজ আক্তার বাংলানিউজকে জানান, প্রথমে শখ করে বাগান করলেও এখন ব্যবসায়ীকভাবে ফুল বিক্রি করছি, প্রতিদিনই কমবেশি ফুল বিক্রি করতে পারছি, পাশাপাশি আত্মীয় ও বন্ধুদের বিনামূল্যে ফুল বিতরণ করে ফুলবাগান সম্প্রসারণ করে যাচ্ছি।  

বান্দরবান সদরের রোয়াংছড়ি বাসস্টেশন সংলগ্ন ফুলচাষি নুরুল ইসলাম (মিন্টু) বাংলানিউজকে বলেন, ১২ বছর ধরে আমি বান্দরবানে নার্সারি করে যাচ্ছি। বান্দরবানে যে ফুলের ছাহিদা রয়েছে সেটা মেটানোর পরিকল্পনা থেকে আমার নার্সারির যাত্রা শুরু।  
তিনি আরো বলেন, আমার নার্সারিতে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি এবং ১০ জন শ্রমিক প্রতিদিনই আমার বাগানে কাজ করে যাদের বিভিন্ন পরিমাণ বেতন দিয়ে থাকি।  

ফুলচাষি নুরুল ইসলাম আরো বলেন, আমার বাগানে স্টার, মেডিগ্লোড, ইনকা, ডাইনটাস, চেরীসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির উন্নতমানের ফুলের চারা রয়েছে। বান্দরবানে এখন দিনদিন ফুলপ্রেমিদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, এরা আমার কাছ থেকে গাছ সংগ্রহ করে নিজ বাড়ি ও ছাদে লাগিয়ে তাদের নিত্যদিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে।

নার্সারি থেকে ফুলের চারা কিনতে আসা এ্যানি মারমা বাংলানিউজকে জানান, একসময়ে বান্দরবানে ফুলের বড়ই অকাল ছিল, আমাদের ধর্মীয় পূজা অর্চনা করতে বেশ কষ্ট হতো, ফুল ছাড়াই বিভিন্ন মঙ্গল অনুষ্ঠান সম্পাদন করতে হতো, তবে এখন ফুল বান্দরবানে বিভিন্ন দোকান আর নার্সারিতে পাচ্ছি এতে আমরা ভীষণ খুশি।

ফুল কিনতে আসা সুমাইয়া নুরফাত প্রত্যাশা বাংলানিউজকে জানান, বান্দরবানে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে ফুল চাষ আর বিক্রি, এখন আমরা হাতের নাগালে কমবেশি ফুল পাচ্ছি।  

তিনি আরো বলেন, সরকারিভাবে ফুলচাষিদের আরো প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেওয়া হলে বান্দরবানের উৎপাদিত ফুল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

এদিকে ফুল চাষে আরো আগ্রহী করতে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বান্দরবানে ফুল চাষে চাষিদের আরো আগ্রহী করতে নিয়মিত পরামর্শ ও বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে আর এতে ফুলচাষিরা আগের চেয়ে এখন বেশি ফুল উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত হচ্ছে।  

তিনি বলেন, বান্দরবানের মাটি আবহাওয়া ও জলবায়ু ফুল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফুলচাষিরা যদি নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক নিয়মে ফুল চাষ করে তবে বান্দরবানের উৎপাদিত ফুল সুন্দর ও শোভনীয় হবে এবং স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

বান্দরবান হর্টিকালচার সেন্টারের তথ্যমতে, বান্দরবানে হর্টিকালচার সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ২০-২১ অর্থবছরে ৩৪ হাজার বিভিন্ন ধরনের ফুলের চারা উৎপাদন করা হয়েছে আর এ থেকে বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৯০০টি চারা। এই ফুল চাষে জড়িত হয়েছে জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক ফুলচাষি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।