ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছে ৩৪৫ বায়বীয় ও ৩৮ ঝুলন্ত মূলের বটগাছ

এম রবিউল ইসলাম রবি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২১
বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছে ৩৪৫ বায়বীয় ও ৩৮ ঝুলন্ত মূলের বটগাছ নুয়ে পড়ছে ৪০০ বছরের বটগাছ। ছবি: বাংলানিউজ

ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বটগাছ। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই বটগাছ নষ্ট হতে বসেছে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে।

২০০৯ সাল থেকে যশোর সামাজিক বন বিভাগ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিলেও জমি অধিগ্রহণসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোন অগ্রগতি নেই। গাছটির চারপাশে চলাচলের রাস্তার হওয়ার কারণে দিন দিন মারা যাচ্ছে গাছটি। এ অবস্থায় এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও গাছটিকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী গ্রামের মৌজায় জন্মালেও এটা সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ হিসেবে পরিচিত। প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর বেড়ে ওঠা এ বৃক্ষের ডালপালা বয়সের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

স্থানীয়  বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেথুলী গ্রামের একটি কুয়ার পাশে জন্মায় গাছটি। তবে এটি রোপণ করা হয়েছিল নাকি এমনিতেই জন্মেছে তার সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এলাকাবাসীর ধারণা আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে কোন উড়ন্ত পাখির মুখ থেকে পতিত ফলেই জন্ম হতে পারে এ বৃক্ষের।

বনবিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, অতীতে বেশি জায়গা জুড়ে বৃক্ষটি বিস্তৃত থাকলেও এখন আছে ২.০৮ একর জুড়ে। এ বৃক্ষের মোট ৩৪৫টি বায়বীয় মূল রয়েছে। যে মূলগুলো মাটির গভীরে প্রবেশ করেছে। আর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে ৩৮টি মূল। বটগাছটি দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভীড় জমায় ঐতিহ্যবাহী এ বৃক্ষটির তলে। প্রকৃতি প্রেমিক দর্শনার্থীরা শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থেকে এ অজ পাড়াগায়ের এ বৃক্ষের তলে এসে কোকিল, ঘুঘু, টিয়া, শালিকসহ নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির শব্দে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেকে প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে ফেলেন।

তবে বটবৃক্ষটি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। বৃক্ষটিকে তিন দিকে লোক চলাচলের রাস্তা থাকায় বেড়ে উঠতে পারছে না আপন গতিতে।

স্থানীয় রাড়িপাড়া গ্রামের এম এ জলিল বাংলানিউজকে জানান, বিভিন্ন সময়ে অনেকে সরকারি ভাবে বটগাছের উন্নয়নের কথা শুনিয়েছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে দুর থেকে আসা দর্শণার্থীদের কল্যাণে ১৯৮৫ সালে নির্মিত রেস্ট হাউজও আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। পরে নতুন একটি রেষ্ট হাউজ নির্মিত হয়েছে কিন্তু দেখ ভালে নিয়োজিত ব্যক্তি অধিকাংশ সময় থাকেন না। এলাকার মানুষের নজরদারিতে দীর্ঘদিন ধরে গাছটি বেঁচে আছে। সরকারি ভাবে যতটুকু করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। একটি পুর্ণাঙ্গ পিকনিক স্পট করতে পারলে এলাকার শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে। রক্ষা পাবে এলাকার ও দেশের একটি দর্শনীয় স্থান।

স্থানীয় মোশারফ হোসেন মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি মল্লিকপুর ও বেথুলী পাশাপাশি গ্রাম দুটির মানুষের মধ্যে বটগাছ। এটা আমাদের সকলের সম্পদ। সব মানুষের কথা বটবৃক্ষটির রক্ষণাবেক্ষণ দরকার। বর্তমান রেস্ট হাউজটি সাধারণ দর্শনার্থীদের কোন কল্যাণে আসে না। বৃক্ষটির ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বন বিভাগ সরকারের উচ্চ মহলে ধরণা দিয়েছেন কিন্তু তেমন কোন লাভ হয়নি।

ঝিনাইদহ জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা খোন্দকার মো. গিয়াস উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, আগে সরকারি ভাবে খাস জমিতে ছিল। পরর্বতীতে বন বিভাগ দেখলো এশিয়ার সেরা বটগাছ রক্ষণাবেক্ষণ করার দরকার ছিল অনেক আগে থেকেই। পরে জেলা প্রশাসন থেকে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে নিয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করা হয়েছে। দেখাশোনার জন্য আমাদের লোক আছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি ব্রাক হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ওই স্থানটি আরও ভালো করার জন্য বন বিভাগ একটি প্রকল্প উপরে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে একটা পর্যটন কেন্দ্রসহ একটি পুর্ণাঙ্গ পিকনিক স্পট হতে পারে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২১
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।