ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সোমার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান স্বজনরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১
সোমার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান স্বজনরা

রাজশাহী: ছোটবেলা থেকে সিরাজুম মনিরা সোমার স্বপ্ন ছিল বড় চিকিৎসক হওয়ার। চীনে গিয়ে এমবিবিএস পাস করে আসেন।

লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তার। স্বজনদের স্বপ্ন ছিল, সোমা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবেন। এমবিবিএস পাসও করলেন। কিন্তু আর মানুষের সেবা করার সুযোগ পেলেন না।  

কিন্তু সব স্বপ্ন ধুলোয় মিলে গেলো সোমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। রাজধানী খিলক্ষেতে ভাড়া বাসা থেকে গত ২৫ জানুয়ারি ইন্টার্ন চিকিৎসক সোমার হাত-পা-মুখমণ্ডল স্ককটেপ দিয়ে মোড়ানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  

পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক রাকিবুল আজাদের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তারা বাসাও ভাড়া নিয়েছিলেন। ওই বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমাকে হত্যার অভিযোগে ইন্টার্ন চিকিৎসক আজাদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত সিরাজুম মনিরা সোমার বাড়ি রাজশাহীতে। বাবা আতাউর রহমান রাজশাহীতে প্রাণিসম্পদ বিভাগে চাকরি করেন। আর মা হোসনে আরা বেল পুকুর হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে সোমা বড়। তার ছোট ভাই একাদশ শ্রেণিতে পড়েন।

রাজশাহীর বানেশ্বর নাদের আলী গার্লস কলেজ থেকে ২০০৯ সালে সোমা এসএসসি এবং ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১২ সালে এমবিবিএস পড়তে চীনে যান। সেখান থেকে করে ২০১৮ সালে দেশে ফেরেন। এরপর বিএমডিসি থেকে পরীক্ষায় পাস করে ২০২০ সালের মার্চ থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছিলেন।

স্বজনদের অভিযোগ, সোমাকে হত্যা করা হয়েছে। সোমাকে রাকিবুল আজাদ বিয়ে করেছেন বলে দাবি করলেও তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। অথচ তারা একসঙ্গে থাকতেন।

সোমার বাবা আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক কষ্ট করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে যেন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে। সে এমবিবিএস পাসও করল। কিন্তু মানুষের সেবা করার সুযোগ পেলো না। যে আমার মেয়েকে খুন করেছে, তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।

তিনি আরও বলেন, দেশে ফেরার পর মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। মেয়ে বললো, ইন্টার্ন শেষে কোথাও জয়েন করে বিয়ে করবে। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ২৫ জানুয়ারি রাজশাহী থেকে ঢাকায় যায়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের চিকিৎসক জানিয়েছেন, সোমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

সোমার মা হোসনে আরা বলেন, ছোটবেলা থেকে সোমার স্বপ্ন ছিল বড় চিকিৎসক হবে। তাই চীনে গিয়ে পড়াশোনা করে আসে। সামনে, লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু খুন হওয়ায় তা আর হলো না। মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

এদিকে, গত ২৬ জানুয়ারি দুপুরে খিলক্ষেত থানায় বাদী হয়ে মামলা করেছেন সোমার বাবা আতাউর রহমান। মামলার নথিপত্রের তথ্য বলছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে খিলক্ষেতের আম বাগানের দুই রুমের ওই বাসাটি ভাড়া নেন সোমা ও রাকিবুল আজাদ। বাড়িওয়ালাকে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলেন।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বির আহম্মদ জানান, ইন্টার্ন করা অবস্থায় ওই হাসপাতালেরই ইন্টার্ন চিকিৎসক রাকিবুল আজাদের সঙ্গে সোমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে খিলক্ষেত এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন তারা। সোমাকে খুন করার অভিযোগে আজাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুনের রহস্য উদঘাটনে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাড়িওয়ালা ফাহাদ বলেন, দুই রুমের ওই বাসাটি স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নেন সোমা আর আজাদ। দু’জনই নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দেন।  

মাঝে-মধ্যে ঝগড়া লাগতো। তবে কাউকে কিছু বুঝতে দিতেন না। দীর্ঘদিন পরিবার থেকে কেউ না আসায় আমরা জানতে চাইতাম। তারা বলতেন যে করোনার কারণে কেউ আসেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২১
এসএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।