ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাকা চেয়ে প্রতারণা, পরকীয়া প্রেমিককে ৫ টুকরো করলেন শাহনাজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
টাকা চেয়ে প্রতারণা, পরকীয়া প্রেমিককে ৫ টুকরো করলেন শাহনাজ শাহনাজ পারভীন

ঢাকা: রাজধানীর ওয়ারী এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ পারভীনের (৫০) দীর্ঘদিনের পরকীয়া সম্পর্ক। এক পর্যায়ে এ সম্পর্ককে পুঁজি করে টাকা চেয়ে প্রতারণা শুরু করেন প্রেমিক সজিব হাসান (৩২)।

এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সজিবকে হত্যার পর কেটে পাঁচ টুকরো করেন শাহনাজ।  

গত বৃহস্পতিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ওয়ারীর ১৭/১ কে এম দাস লেনের একটি বাসা থেকে সজিবের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় মরদেহের পাশেই বসা অবস্থায় শাহনাজকে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় শাহনাজকে একমাত্র আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতার শাহনাজ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই খুন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত পাঁচ বছর ধরে ওয়ারীর ১৭/১ কে এম দাস লেনের ওই বাসায় বসবাস করেন সজিব। তিনি সায়েদাবাদে শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টারে চাকরি করতেন এবং বুটিকসের ব্যবসা করতেন। শাহনাজকে স্ত্রী পরিচয় দিয়েই বাসাটি ভাড়া নেন সজীব। স্ত্রী পরিচয়েই শাহনাজ ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়ত করতেন। স্থানীয়রা তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই জানতেন।

ওয়ারী পুলিশ জানায়, শাহনাজের সঙ্গে সজীবের পাঁচ বছর আগে সম্পর্ক হয়। তখন শাহনাজকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে সজীব ১৭/১ কে এম দাস লেনের চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নেন। শাহনাজের বাসাও একই এলাকায়। তিনি প্রায় নিয়মিতই সজীবের বাসায় যেতেন।

সজীবের বাসায় বুটিকসের কাজ শিখছেন বলে তার স্বামীকে বলে যেতেন। তার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। তাদের দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং একমাত্র মেয়ে কলেজে পড়েন।

এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়ারী থানায় জসিম উদ্দিন (৫৫) নামে একজন শাহনাজকে স্ত্রী দাবি করে তার সন্ধান চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, তার স্ত্রী শাহনাজ কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে চলে গেছে। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। তার খোঁজ পেতে তদন্ত করছিল ওয়ারী থানা পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বামীকে ফোন করে একটি বাসায় বিপদে পড়েছেন বলে উদ্ধার করতে অনুরোধ জানান শাহনাজ। এ তথ্যের ভিত্তিতে জিডি করা জসিম ওয়ারী থানা পুলিশকে ফোন করে জানান, তার স্ত্রী শাহনাজকে একটি বাসায় আটকে রাখা হয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে ওয়ারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সজিবের পাঁচ টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, তিন দিন আগে ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড় নিয়ে সজীবের বাসায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য উঠেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সজীব তাকে লাঠিপেটা করেন। এরপর সজীব ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির সময় তার হাতে ছুরির আঘাত লাগে।

এক পর্যায়ে সজীবের কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন শাহনাজ। এতে সজীব মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। এরপর ছুরি দিয়ে সজীবের দুই হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে তিনি তার স্বামীকে ফোন করেন।

শাহনাজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হান্নানুল ইসলাম জানান, শাহনাজ প্রাথমিকভাবে পুলিশকে জানায় যে, তার সঙ্গে সজীবের দীর্ঘ পাঁচ বছরের পরকীয়া সম্পর্ক। এ পরকীয়া সম্পর্কের জেরে তাদের মধ্যে অবাধ মেলামেশা এবং ওই বাসায় যাতায়াত ছিল। এ সম্পর্কের জের ধরে সম্প্রতি সজিব তার সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন। প্রতারণার অংশ হিসেবে সজিব শাহনাজের কাছে টাকা দাবি করেন, না হলে অসামাজিক এ সম্পর্কের কথা সবাইকে বলে দেবেন বলে জানান।

শাহনাজের দাবি, দ্বন্দ্বের জেরে তাকে পেছন থেকে চাকু দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেন সজিব। তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তা প্রতিরোধ করেন এবং ওই ধারালো অস্ত্রে সজিবকে আঘাত করেন। প্রথমে সজিবের পেটের ভুড়ি বেড়িয়ে যায়। পরে আঘাতে আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর সজিবের মরদেহ পাঁচ টুকরো করে বাথরুমে ফেলেন।

পুলিশ জানায়, সজিবের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে। বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে, তারাও যোগাযোগ করেছেন। সজিবের মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

শাহনাজ এখন পর্যন্ত একাই হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এরপরও হত্যার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছেন কিনা তা তদন্ত করে দেখবে পুলিশ। ওই নারীকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।