ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংসার সামলিয়ে নিভৃত গ্রামের কলেজ থেকে দেশসেরা কুইন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
সংসার সামলিয়ে নিভৃত গ্রামের কলেজ থেকে দেশসেরা কুইন

মাগুরা: স্বামী সংসার ও সন্তান সামলিয়ে নিভৃত গ্রামের কলেজ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ফাইনাল পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম হয়েছেন মাগুরার কুইন আরা।

কুইন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ঝগড়দিয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর খানের মেয়ে।

তিনি মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল নাজির আহমেদ কলেজ থেকে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ফাইনাল পরীক্ষায় সিজিপিএ-৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৬৮ পেয়ে সারা দেশে প্রথম হয়েছেন।

দেশ সেরা হওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড-২০১৭ এর মেডেল ও সনদপত্র বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুইনের হাতে তুলে দেন কলেজের অধ্যক্ষ খন্দকার হায়াত আলী।

কুইন আরা জানান, ভালো ফল করবেন জানতেন তবে দেশ সেরা হবেন ভাবেননি। দারিদ্র্যতার কারণে তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি। বাড়ির পাশে নহাটা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে  এসএসসিতে ৪.৬৯ ও এইএসসিতে জিপিএ-৫ পান।

দারিদ্রতা আর মেয়ে হওয়ার কারণে পরিবার থেকে বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি। এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও দিতে পারেননি। পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। পরে বাড়ির পাশে বেরইল নাজির আহমেদ কলেজে অনার্স কোর্স চালু হলে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান শ্রেণির প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হন। সম্প্রতি অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার  ফল প্রকাশিত হয়। সারা দেশের মধ্যে প্রথম হওয়ার বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষকে অবহিত করেন। কলেজ থেকে দেশ সেরা ফলের বিষয়টি কুইনকে জানান অধ্যক্ষ।

প্রতিদিন ৪/৫ ঘণ্টা লেখাপড়া করতেন কুইন। কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান মোসা. রেহেনা পারভীন পড়ালেখা ও নোট তৈরিতে সহযোগিতা করতেন। তিনি ভবিষ্যতে বিসিএস দিয়ে শিক্ষক হতে চান।

২ ভাই আর ৫ বোনের মধ্যে কুইন আরা চার নম্বর। ভাইবোন সবাই লেখাপড়া করেন। মা শাহীন  আরা বেগম গৃহিনী। বাবা মোস্তাফিজুর খান  ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

২০১৬ সালে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় কুইনের বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নাম আবু বকর সিদ্দিক। তার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বেরোইল -পলিতা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে। কুইন ছয়দিন আগে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন।

কুইনের বাবা মোস্তাফিজুর খান বলেন, মেয়েটি ছোটবেলা থেকে পড়ালেখায় ভালো। দারিদ্রতার কারণে তাকে ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারিনি। বাইরে পড়তে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল দারিদ্রতার কারণে সম্ভব হয়নি। মেয়ে সারা দেশের মধ্যে প্রথম হওয়ার শুনে তিনি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

মা শাহীন আরা বেগম বলেন, মেয়েটি নিজের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় এই পর্যন্ত এসেছে। তারজন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি।

কুইনের প্রতিবেশী ও সামাজিক সংগঠন নহাটা ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া জানান, কুইনের সাফল্যে আমরা গর্বিত। দারিদ্র জয়ী সংগ্রামীর দেশ সেরা হওয়ার গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে।

নাজির আহমেদ কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান মোসা. রেহেনা পারভীন বলেন, কুইন আরা একজন আত্মপ্রত্যয়ী শিক্ষার্থী। প্রচণ্ড পরিশ্রমী ও ভালো কিছু করার মানসিকতা তাকে দেশ সেরা হতে সহযোগিতা করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।