ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নগরে বসন্তের আগমন

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
নগরে বসন্তের আগমন বসন্ত উৎসব ১৪২৭। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই বৃক্ষের দিকে তাকানো। সেখানে আজ নতুন ফুল।

সেই ফুল হাতে নিয়ে হেঁটে চলা নগরের রাস্তায়। নতুন ফুলের মাতাল ঘ্রাণে পুরনো পাতারা ঝরে পড়ে গাছ থেকে। আবির এসে ছুঁয়ে যায় টোল পড়া গাল। তার সঙ্গে দূর থেকে কোকিলের সুরের মতো ভেসে আসে- বসন্ত এসে গেছে!

সত্যিই তাই, সব স্বপ্ন আর অপেক্ষা পূর্ণ করে অবেশেষে বসন্ত এলো। দিনক্ষণ মেপে, অনেকটা উচ্ছলাতা নিয়ে বসন্ত এলো নগরে। তারপর বাদ্যযন্ত্র চতুরঙ্গীর সুরে সে ধার দিলো নাগরিক জীবনের চঞ্চলতায়। বসন্ত ভালোবাসা মানুষগুলো তাকে বরণ করে নিলো নানান আয়োজনে।

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো বসন্ত উৎসব। তাতে জীবনের সীমাবদ্ধ বৃত্তকে পেরিয়ে গাওয়া হলো মলয় বাতাসের গান।

আয়োজনে প্রথমেই সুর তোলেন যন্ত্রশিল্পী দীপেন সরকার তার চতুরঙ্গীতে। এরপর সম্মেলক সঙ্গীত 'ফুল ফাগুনের এলো মরসুম'। ফাল্গুন আর ভালোবাসার মিশ্রণে আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাগুনের মোহনায় ততক্ষণে দর্শক সারি পরিপূর্ণ হয়েছে বসন্ত ভালোবাসা মানুষের লাল আর বাসন্তী রঙের সাজে। শিল্পীদের সঙ্গে গুণগুণিয়ে সুর ওঠে- বসন্ত জাগ্রত দ্বারে!

আটপৌরে নগর-যান্ত্রিকতায় বসন্তের মতো আর কোনও ঋতু সম্ভবত এতোটা শিহরণ জাগাতে পারে না। বসন্তই সম্ভবত এখনও পারে বর্ণিলতায় ভরিয়ে দিতে। রঙে, গন্ধে, আলোয়, মলয়ে অসীমান্তিক নৈসর্গিকতায় ভাসিয়ে দিতে পারে জীবনের সীমাবদ্ধতাকে। উৎসবের বসন্ত কথন পর্বে সেসব কথাই বলেন বিশিষ্ট জনেরা।

বসন্ত উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বিশিষ্ট নাট্যজন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ষড়ঋতুর সবথেকে আনন্দময় যে ঋতুতি, সেই বসন্ত আমরা উদযাপন করছি বসন্ত উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে। বসন্ত নিশ্চিতভাবে সেরা ঋতু। সেই সেরা ঋতু বিকশিত হয় নানাভাবে; ফুলে এবং পাখির কণ্ঠে তার আগমনী গান দিয়ে। নানা রঙ্গে রঞ্জিত হয় বসুধা, পাখির কলতানে মুখরিত হয় প্রকৃতি। আর এইভাবেই বিকশিত হয় মানুষ। আসুন অতিমারিকে পাশে ঠেলে আমরা এগিয়ে যাই বসন্তের অনুপ্রেরণায়।

আলোচনায় মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, বাংলার নতুন পঞ্জিকা অনুযায়ী গত বছর থেকে আমরা ১৪ তারিখে পহেলা ফাল্গুন উদযাপন করছি। আজকে ভালোবাসা এবং বসন্তের যে মাখামাখি, তা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করতে চাই। রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই আমরা এই পথে এগিয়েছিলাম, উপমহাদেশের ঋতুর উৎসবে। আমরা আপনাদের নিয়ে বসন্তের অবগাহনে মেতে উঠতে চাই। বসন্তের যে রঙের ছটা, তা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক, বর্ণিল যে আনন্দ, সেটিই আমাদের কাম্য।

স্থপতি শফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, এবছর করোনা কালের বছর। তবু বসন্ত তার কাল নিয়মে চলে এসেছে। আমরাও সকলে এই বসন্ত পালন করে সেই করোনার যাতনা দূর করতে চাই।

কাজল দেবনাথ বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ভাগ্যবান। পৃথিবীর কোথাও কিন্তু ষড়ঋতু নেই। আর এই ছয় ঋতুর মধ্যে বসন্ত একেবারে ঋতুরাজ। তরুণ প্রজন্মের জন্য বলতে চাই- প্রকৃতি আমাদের আসল জায়গা। আমাদের যে অর্জন তার সবকিছুই প্রকৃতির কাছ থেকে। আসুন আমরা নিজেদের প্রকৃতির মধ্যে বিলিয়ে দিই।

বসন্ত কথন শেষে শুরু হয় আবির মাখার পর্ব। তারপর একে একে মঞ্চে উঠে আসে বসন্তের গান, নৃত্য। তা থেকে বাদ পড়েনা আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠী সংস্কৃতিও। সাঁওতাল নৃত্যের সঙ্গে বেজে ওঠে- ‘শালগাছে ফুটেছে সারজম, মহুয়ায় ফুটেছে মাতকম’। সাঁওতালি ভাষার সে সুরে বসন্তের এ উৎসবে প্রকৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে যার সমস্ত মানুষেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
এইচএমএস /কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।