ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িই সবজির বাগান

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
চরাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িই সবজির বাগান শিম গাছ। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁদপুর: বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীত মৌসুমে সবজির আবাদ বেশি হয়। চরাঞ্চলও সেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই।

নদীর ভাঙা গড়ার খেলায় এক চর থেকে অন্য চরে ঘর-বাড়ি তৈরি করে চরাঞ্চলের লোকজন। নতুন করে স্থাপন করা বসতিতে ফের তারা স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। সেখানেই গড়ে তোলেন সবজির বাগান। একইসঙ্গে করেন গবাদি পশু পালন।

বর্তমানে চরাঞ্চলে উৎপাদিত সবজি দিয়ে চাহিদা মেটে শহরাঞ্চলের একাংশের। চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমে চরগুলোর ছোট বাড়িগুলো দেখে মেন হয় প্রতিটি বাড়িই যেন সবজির বাগান।

সম্প্রতি চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলাশিয়া, শিলার চর, চিরারচর ও বাঁশগাড়ি চরে গিয়ে দেখা গেছে পদ্মা-মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার মানুষগুলো চরাঞ্চলে নতুন নতুন বাড়ি তৈরি করেছে। বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ বাড়ির চারদিকে পানি থৈ থৈ করে। কিন্তু শীত মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে জমিতে সরিষা, মাশকালাইসহ অন্যান্য শীতকালীন সবজির আবাদ করেন তারা। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করেন সবজি ক্ষেতে। প্রতিটি বাড়ির আঙিনা নারীদের হাতের ছোঁয়ায় সবজির বাগানে পরিণত হয়।  

 

বলাশিয়া চরের রোকেয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছি বহুবার। তারপরেও আবার সন্তানদের নিয়ে মাথা গুঁজেছি এই চরে। গত ১ বছর আগে এখানে বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। বাড়িতে শিম, কুমড়া, কদু, পেঁপে, বেগুন গাছ লাগিয়েছি। এগুলো আমাদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করি। এখানকার সবগুলো বাড়িতেই এধরনের সবজির বাগান আছে।  

একই চরের রোকসানা আক্তার বলেন, আমাদের বাড়িতে সবজির বাগান করতে বাজার থেকে সার কিনতে হয় না। আমাদের পালিত গবাদি পশুর জৈব সার দিয়ে সবজির বাগান হয়। অনেক সময় গোয়ালঘর ও বসত ঘরের উপরেই শিম, কুমড়া ও লাউ গাছ লাগানো হয়। কারণ আমরা চরাঞ্চলে স্থায়ী না হওয়ায় বাড়িতে বড় ধরনের কোনো গাছ লাগাই না।  

ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাসান আলী দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের উৎপাদিত সবজি ও গাভীর দুধ প্রতিদিন ট্রলারে করে পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে চাঁদপুর শহরে চলে যায়। শহরের চরাঞ্চলের সবজির চাহিদা বেশি। প্রতিকেজি শিম পাইকারি বিক্রি হয় ২৫-৩০ টাকা। প্রতি পিস লাউ ৩০-৪০ টাকা। কুমড়া গড়ে প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা। এছাড়াও অনেকে কুমড়া, কদু ও মাশকালাই শাক বিক্রি করেন। শীত মৌসুমে নদীতে মাছ কম পাওয়া যায়। সবজির আবাদ হলে তা বিক্রি করে চরাঞ্চলের লোকদের আয় রোজগার বাড়ে।

স্থানীয় ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সফিউল্লাহ সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন চরাঞ্চলে আসা-যাওয়া করি। এখানকার মানুষ খুবই কর্মঠ। বছর জুড়ে কোনো না কোনো কাজে জড়িত থাকেন। তবে এখানকার প্রতিটি বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়। জৈব সার ব্যবহার করায় এখানকার সবজি বিষমুক্ত হয় আর তাই চরাঞ্চলের সবজির চাহিদা শহরে অনেক বেশি।

রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বাংলানিউজকে বলেন, নদীর কারণে চরাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এখানকার বাসিন্দাদের কৃষিকাজে তেমন কোনো প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগ হয় না। তারপরেও পূর্ব পুরুষদের দেখাদেখি তারাও কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাড়িতে সবজি এবং জমিতে একাধিক উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
আরএ/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।