ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তাজরীন ট্রাজেডি: দাবি করতে করতেই ৯ বছর পার

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
তাজরীন ট্রাজেডি: দাবি করতে করতেই ৯ বছর পার

সাভার (ঢাকা): তাজরীন ট্র্যাজেডির নয় বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১২ সালের এই দিনে সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

এতে ১১৩ জন শ্রমিক মারা যান। আহত হন আরো অর্ধশতাধিক।

এই আহত ও নিহত শ্রমিকের স্বজনেরা সরকারসহ পোশাক শিল্পকারখানার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে তাদের ক্ষতিপূরণসহ বিচার দাবি করার আজ দীর্ঘ নয় বছর অতিবাহিত হলেও কোনো দাবি পূর্ণ হয়নি তাদের। দাবি জানালে উল্টো স্থানীয় ও শ্রমিক নেতারা তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

ট্রাজেডিকে হৃদয় থেকে ভুলতে পারেনি অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবার। নিহতদের পরিবার ভোগ করছে স্বজন হারানোর বেদনা। পঙ্গু সদস্যদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে তাদের পরিবার। তবে এ ঘটনার বিচার কাজ সম্পন্ন ও ক্ষতিপূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক শ্রমিক।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে তাজরীন গার্মেন্টসের পাশে গিয়ে কথা হয় নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকদের সঙ্গে।

নিহত শ্রমিকদের স্বজন ও আহত শ্রমিকরা বাংলানিউজকে জানান, আজ তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের নয় বছর পূর্ণ হলো। কিন্তু এতদিন পরেও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার এবং বিজিএমইএ। তাদের কোনো দাবিই এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা শুধু সহয়তা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। এমতাবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

২০১২ সালে রেবা খাতুন নামের এক শ্রমিক তাজরীন ফ্যাশনের তিনতলায় সুইং অপেরটর হিসেবে কাজ করতেন। তিনিও সেদিন আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর তিন তলা থেকে লাফ দেন। সেই লাফ দিয়ে নিচে নামায় তার কোমরে হাড় ও পায়ে ব্যথা পান। সেই ব্যাথা নিয়ে দীর্ঘ নয় বছর ধরে নেতাসহ পোশাক সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে ক্ষতিপূরণ ও মালিকের বিচারের দাবি করে আসচ্ছেন। কিন্তু কোনো দাবিও এখনো তাদের পূর্ণ হয়নি।

রেবা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, এই নয়টা বছর কতো না জায়গায় গিয়েছি। শুধু বিদেশি কিছু সহয়তা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। শেষমেশ এখন যদি কোথায় আমাদের দাবি জানাতে যাই তাহলে নানা মহল থেকে চাপ আসে। এ যাবৎ লাখ খানেক টাকা সহায়তা পেয়েছি তবে সেটা ক্ষতিপূরণ না। আমার মালিকের বিচার চাই আমাদের ক্ষতিপূরণ চাই।  

আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্বজনের নেতৃত্ব দেন সবিতা রানী। তিনিও তাজরীন গার্মেন্টসের আগুনে পুড়ে যাওয়া ভুক্তভোগী একজন শ্রমিক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কার কাছে কি বলবো। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। কথা বলতে গেলে পরে খুঁজে বের করে নানা চাপ দেয়। এ যাবৎ কাল অনেক বলেছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়নি। আজ এতোগুলো শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমাদের খোঁজ কে রাখে। আমাদের কোনো দাবি এখনো পূর্ণ হয়নি। সরকার তো পারে আমাদের তাজরীনের ভবনটি আমাদের জন্য কাজে লাগানোর কিছু শ্রমিক হলেও তো সেখানে থাকতে পারবো।  

এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, আজ তাজরীনের অনেক শ্রমিক চিকিৎসার কারণে ভুগছেন। সরকার থেকে যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তা নামমাত্র। শ্রমিকরা তাদের ক্ষতিপূরণ তো পাইনি। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এছাড়া তাজরীনের পাশে অথবা জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে এখানে তাদের পুর্নবাসন ও চিকিৎসা ক্যাম্প করে দেওয়া হোক। এছাড়া তাজরীনের মালিকের বিচার ব্যবস্থা দ্রুত সম্পন্ন করা হকো। এতোগুলো দাবির একটাও এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। আর কবে হবে সেটাও আমরা কেউ জানি না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।