ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশে প্রথম রিকশা আনেন যিনি  

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
দেশে প্রথম রিকশা আনেন যিনি   জাপানে হাতে টানা রিকশা

রাজধানীর সর্বত্রই চলাচল করা একটি বাহন রিকশা। দেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জেও দেখা মেলে বাহনটির।

বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোনো দেশেই এত পরিমাণে রিকশা চোখে পড়ে না। তাই হয়তো ঢাকাকে অনেকেই রিকশার নগরী বলে থাকেন।  

বিবিসি বাংলার বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র ঢাকায় বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ১৫ লাখ রিকশা চলাচল করে। পুরো দেশে কী পরিমাণ রিকশা চলছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি।  

এই বাহনে জীবিকা নির্ভর করছে দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠীর মানুষ। শুধু তাই নয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভর করেন অনেকেই। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ২০১৫ সালের প্রকাশনা অনুযায়ী, ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষ নিয়মিত চলাচলের ক্ষেত্রে রিকশার ওপর নির্ভরশীল।

দেশে জনপ্রিয় এই বাহনটি এসেছে বাইরে থেকে। বেশিরভাগ গবেষকের মতে, রিকশার উদ্ভব হয়েছে জাপানে। কোনো কোনো গবেষকের মতে, এই রিকশা তৈরি করেছেন মার্কিনীরা।

বাংলাদেশে যে প্যাডেল দেওয়া সাইকেল-রিকশার প্রচলন, সেটা সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে বলে ইতিহাসবিদ ও গবেষক মুনতাসির মামুনের স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী ঢাকা বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে রিকশা এলো যেভাবে 
বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, জাপানি ভাষায় ‘নিনতাকু’ নামে পরিচিত রিকশার উৎপত্তি জাপানে হলেও বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের মধ্যে জাপান থেকে সাইকেল রিকশা উঠে যায়। বরং বাংলাদেশে এসেই এই বাহনটি প্রসার ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

মুনতাসির মামুনের গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই রিকশা এসেছে ১৯৩০-এর দশকে ভারত থেকে। ভারতে প্রথম রিকশার প্রচলন শুরু হয় ১৮৮০ সালের দিকে সিমলা শহরে। বলা হয়, রেভারেন্ট জে ফরডাইস নামের এক স্কটিশ মিশনারী প্রথম এই রিকশা এনেছেন। এর প্রায় ২০ বছর পর ১৯৯০ সালে সেই রিকশা কলকাতায় আসে।

হাতে টানা রিকশা

প্রথম রিকশা আসে চট্টগ্রামে, এরপর ঢাকায়
মিয়ানমারের রেঙ্গুনে ততদিনে রিকশা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে বাংলাপিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়। রেঙ্গুন থেকেই চট্টগ্রামে প্রথম রিকশা আসে ১৯১৯ সালের দিকে। এরপর রিকশা আসে ঢাকায়। তবে ঢাকার রিকশা এসেছিল ভারতের কলকাতা থেকে, ১৯৩০-এর দশকে। এ কারণে দুই রিকশার কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য ছিল আলাদা।  

১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি রিকশা বাংলাদেশে আসে এবং ১৯৩৭ সালে আসে ঢাকায়। বাংলাদেশে শুরু থেকে এই সাইকেল রিকশার প্রচলন ঘটে, মানুষের হাতে টানা রিকশা নয়।

দেশে যার মাধ্যমে রিকশা আসে
মোমিনুল হকের আত্মজীবনীতে এ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৪০ সালের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের পাট কোম্পানি রেলি ব্রাদার্সের এক কেরানী কলকাতা থেকে একটি রিকশা নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন। তার মতে, এর আগে পূর্ববঙ্গে কেউ রিকশা দেখেনি।  

প্রথম রিকশার মালিক ছিলেন যদু গোপাল দত্ত। প্রথম রিকশা চালকের নাম নরেশ বলে মোমিনুল হকের আত্মজীবনীতে উল্লেখ আছে।

এরপর যদু গোপাল দত্তের প্রতিবেশী শিশির মিত্র চারটি রিকশা আমদানি করেন। সেই থেকেই অল্প অল্প করে রিকশা আমদানি শুরু হয়।

বাংলাপিডিয়া বলছে, নারায়ণগঞ্জ এবং নেত্রকোনা শহরে বসবাসরত ইউরোপীয় পাট রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ১৯৩৮ সালে প্রথম কলকাতা থেকে চেইন লাগানো রিকশা আমদানি করে। এরপর ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার একজন বাঙালি জমিদার এবং ওয়ারীর এক গণ্যমান্য ব্যক্তি রিকশা কিনে ঢাকায় প্রচলন করেন বলে জানা যায়।

ঢাকায় প্রথম রিকশার লাইসেন্স ১৯৪৪ সালের দিকে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এখন ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা এবং রংপুর শহরে মোট যানবাহনের মধ্যে রিকশার সংখ্যার শতকরা হার যথাক্রমে ৪৯%, ৭৮%, ৮০% এবং ৫৫%।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২১
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।