ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিভাগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় চায় ফরিদপুরবাসী

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২১
বিভাগের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় চায় ফরিদপুরবাসী

ফরিদপুর: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বৃহত্তর ফরিদপুরকে ‘পদ্মা বিভাগ’ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগেও তিনি একটি দলীয় অনুষ্ঠানে ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করার বিষয়ে বলেছিলেন দেশে ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে দুটি বিভাগ করা হবে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণার পর ফরিদপুর জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রয়া দেখা গেছে। কেউ এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, আবার কেউ বলছেন জাতির জনকের জন্ম ফরিদপুরে, ফরিদপুর নামেই বিভাগ হওয়া দরকার। আবার অনেকেই বলছেন, বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষের শিক্ষা বিস্তার প্রসারে বিভাগের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের।

এ বিষয়ে কথা হয় ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক একাধিকবারের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজের সঙ্গে।  

তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর ফরিদপুর দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশ শাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নয়নের ছোঁয়া শুরু হয়।  

ফরিদপুরকে বিভাগ করার ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা বিস্তার লাভের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা খুবই প্রয়োজন।

 ফরিদপুর দেশের প্রাচীনতম একটা জেলা, সেটাকে আমরা বাদ দেবো এটা কতটা যৌক্তিক। আমি দাবি করি অবশ্যই বিভাগ হোক, পাশাপাশি এ অঞ্চলে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সময়ে দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জাতীয়তাবাদী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আবজাল হোসেন খাঁন পলাশ।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী সরকার প্রধানের বিভাগ করার ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, প্রাচীনতম এ জেলাকে আরও আগে বিভাগ ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দরকার ছিল। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত দিয়ে বিভাগ পাচ্ছি আমরা, আর সেটি যে নামেই হোক। তবে আমাদের দাবি বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা বিস্তারের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি ভিত্তিতে তিনি দেবেন।

একনেক বৈঠকে ফরিদপুরকে বিভাগ করার ঘোষণার বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন বিধায় আমরা বিভাগের মর্যাদা পাওয়ার দারপ্রান্তে।  

সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি শেখ শহিদুল আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম ফরিদপুরে। তার নামে এ জেলায় (বঙ্গবন্ধু) একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হোক। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ স্বল্প আয়ের। অনেক পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না সন্তানকে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বা অন্যত্র পাঠানো। এজন্য খুব প্রয়োজন ফরিদপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, ফরিদপুর কিংবা পদ্মা বুঝি না, জননেত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা আমাদের যা দেবেন সেটাকেই আলহামদুলিল্লাহ। তবে নেত্রীর কাছে আমাদের প্রাণের দাবি বিভাগের পাশাপাশি আমাদের ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির কমিটির (সনাক) সভাপতি ও নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শিপ্রাগো স্বামী বলেন, বিভাগটা আমাদের বহু দিনের স্বপ্ন। তবে ফরিদপুর নামের সঙ্গে একটি আবেগ জড়িয়ে আছে সেজন্য ফরিদপুর নামে হলে বেশি খুশি হতাম। তারপরেও বলবো বিভাগ হলে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মস্থানসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে সেটাও বা কম কিসের।

ফরিদপুর চেম্বার অব কর্মাসের প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষ শিল্প কলকারখানা থেকে বঞ্চিত। যে কারণে এ অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব বেশি, বিভাগটি পেলে বাড়বে কর্মস্থান।

বিভাগ ঘোষণার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন, যুবদল নেতা কিবরিয়া স্বপন লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি বুঝি না, আমাদের প্রিয় ফরিদপুরকে পদ্মায় বিসর্জন দিতে পারবো না। ফরিদপুর নামেই বিভাগ চাই। ’

 মোহাম্মদ ফরহাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ফরিদপুর নামে বিভাগ চাই, পদ্মা নামে দরকার নেই। সোনালি আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর। ’

মো. ইব্রাহিম মাহমুদ সিটু লিখেছেন, ‘সর্বনাশা পদ্মা নামে নয়, ফরিদপুর নামে পরিচিত হতে চাই। ’

কাজী মনিরুজ্জামান লিখেছেন, ‘জনগণের মতামতের মূল্যায়ন করুন, ফরিদপুর নামে বিভাগ ঘোষণা করুন। ’

মোস্তাসিন রহমান শারেক  লিখেছেন, ‘অবশেষে তাহলে বিভাগ পাচ্ছি আমরা- আলহামদুলিল্লাহ, তবে একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।